ক্ষমতায় টিকে থাকতে তাঁরা যেন ভোট চুরি না করেন: জাহাঙ্গীর আলম
গাজীপুরের টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ মাঠে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী পথসভার আয়োজন করেছিলেন গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় কলেজটির মূল ফটকে তালা ঝুলছিল। ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না তাঁরা। এ নিয়ে প্রচারে বাধার অভিযোগ তুলে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সেখানে এই আসনের নৌকার প্রার্থী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের (রাসেল) নির্দেশে ছাত্রলীগের কর্মীরা কলেজটির ফটকে তালা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর আলমও। তিনি জানান, ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে যেন যানবাহন বা মানুষ চলাচলে সমস্যা না হয়, সে জন্য তাঁরা বৃহস্পতিবার টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রা ও নির্বাচনী পথসভার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের মদদে নামধারী ছাত্রলীগ কলেজের ফটকে তালা দিয়ে দেয়। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তাঁরা আমাদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করেছেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা আমাদের কিছু মানুষের ওপর হাত তুলেছেন। প্রচারকাজে ব্যবহৃত আমাদের মাইক, লিফলেট, পোস্টার ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। এ কারণে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা (প্রার্থী) হয়েও বিজয় দিবসের র্যালি করতে পারলেন না।’
নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যাঁরা ১৮ বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে আছেন, তাঁরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যেন মানুষের জানমালের ক্ষতি না করেন, ভোট চুরি না করেন। এই শহরের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। সে হিসেবে আমরা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা একটা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন চাই। মানুষ যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রাথীদের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন তিনি। এর মধ্যে গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন এবং গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামানের পক্ষে কাজ করছেন। প্রতিদিনই এসব প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন জাহাঙ্গীর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিনকে নিয়ে প্রচারণায় বের হন জাহাঙ্গীর আলম। সেদিন দুপুর থেকে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন তাঁরা। এর মধ্যে বিকেল চারটার দিকে কয়েক শ কর্মী-সমর্থক নিয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে শোভাযাত্রা করেন তাঁরা। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার সড়কসংলগ্ন সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ মাঠে প্রবেশ করতে গেলে ফটক বন্ধ পান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও মাঠের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না তাঁরা। পরে তাঁরা নিজেরাই ফটকের তালা ভেঙে মাঠে প্রবেশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ আহসান রাসেলকে ইঙ্গিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বলেন, ‘১৮ বছরে গাজীপুর ও টঙ্গীতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। মানুষকে জিম্মি করে চাচা (জাহিদ আহসানের চাচা মতিউর রহমান) ও ভাতিজা (জাহিদ আহসান) মিলে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এসব নিয়ে চায়ের স্টলে বসে মানুষ সমালোচনা করে। আমি নির্বাচিত হলে ৭১ সালে যেভাবে হানাদার মুক্ত করেছি, ঠিক সেভাবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর ও টঙ্গীকে হানাদার মুক্ত করব।’
দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর দক্ষিণ আউচপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। সংবাদ সম্মেলনে তোলা অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।