লাঠিতে ভর দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শারমিন
বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শারমিন সুলতানার বিদ্যালয়। এখন সে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঁশের লাঠি নিয়ে আসে বিদ্যালয়ে।
হাত-পা ও শরীরের অস্বাভাবিক গঠন নিয়ে জন্ম হয় শারমিন সুলতানার (১৪)। কয়েক বছর চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু মেয়েকে পড়ালেখা শেখানোর অদম্য ইচ্ছা ছিল দিনমজুর শাহার আলীর।
তাই প্রথম দিকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বেগম পালাক্রমে কোলে করে শারমিনকে বিদ্যালয়ে আনা–নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে মেয়ের ওজন যায় বেড়ে। কোলে করে বিদ্যালয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। হুইলচেয়ার কিনে দেওয়ারও সাধ্য নেই দরিদ্র শাহার আলীর। বাধ্য হয়ে শারমিন এখন বাঁশের লাঠির সহায়তায় বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে।
টাকার অভাবে মেয়েকে হুইলচেয়ার কিনে দিতে পারছেন না জানিয়ে শাহার আলী বলেন, ‘দিনমজুরি করে কোনো রকম সংসার চালাই। একটি অটোচার্জারের হুইলচেয়ার পেলে মেয়ে নিজেই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারত। এতে পরিবারের লোকজনদের দুর্ভোগ কমত।
মেয়েও মানসিকভাবে শান্তি পেত।’ শারমিন সুলতানা জানায়, প্রতিদিন লাঠিতে ভর দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পায়ে ব্যথা করে। এ কারণে ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারে না সে। তবে লেখাপড়ার জন্য এ কষ্ট মেনে নিয়েছে।
শাহার আলীর দুই মেয়েসন্তানের মধ্যে শারমিন বড়। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা গ্রামে। শারমিন বাগমারা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। শাহার আলী বলেন, হাত-পা ও শরীরের অস্বাভাবিক গঠন নিয়ে জন্ম হয় শারমিনের। জন্মের পর শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। সাত-আট বছর পর্যন্ত চিকিৎসা চলে। একপর্যায়ে চিকিৎসকেরা জানান, শারমিন কখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবে না।
একপর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় শারমিনকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় শারমিন। এরপর বিদ্যালয়ে যাতায়াতে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়। ওজন বেড়ে যাওয়ায় আর কোলে করে বহন করাও যাচ্ছিল না তাকে। বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শারমিন সুলতানার বিদ্যালয়। এখন সে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে বাঁশের লাঠি নিয়ে আসে বিদ্যালয়ে। কিন্তু বই-খাতা বহন করতে পারে না শারমিন।
স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, শারমিনকে প্রতিদিন লাঠিতে ভর দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে দেখে কষ্ট লাগে। তবে ওর লেখাপাড়ার আগ্রহ দেখে ভালো লাগা কাজ করে।
শারমিন এভাবে প্রতিবন্ধিতাকে উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াটা অনুকরণীয় বলে মনে করেন বাগমারা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার প্রাং।