নাটোর
অব্যবহৃত পড়ে আছে ৩ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স
চলতি বছরের শুরুতে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেয় ভারত সরকার। জনবলের অভাব ও বেশি ভাড়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্সগুলো অলস পড়ে আছে।
দক্ষ জনবলের অভাব ও বেশি ভাড়ার কারণে ভারত সরকারের উপহারের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স নাটোরে কয়েক মাস ধরে পড়ে আছে। ব্যবহার না হওয়ায় আইসিইউ–সুবিধাসংবলিত সাড়ে চার কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্সগুলো অকেজো হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে ভারত সরকার প্রীতি উপহার হিসেবে নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল ও নাটোর পৌরসভায় একটি করে অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স দেয়।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানান, অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে আইসিইউ সুবিধা আছে। কিন্তু জনবলের সংকটের কারণে আইসিইউ পরিচালনার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এমনকি সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য নিজস্ব চালক পর্যন্ত নেই। নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চালককে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি মাত্র একবার চালানো হয়েছিল।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের ভারপ্রাপ্ত চালক রকিব উদ্দিন জানান, অ্যাম্বুলেন্স আইসিইউ–সুবিধাসংবলিত হলেও তা কাজে আসে না। অন্য সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। টেকনিশিয়ান নিয়োগ না দেওয়া হলে আইসিইউ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
এ ছাড়া অন্য সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের মতোই এই অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে বাইরে থেকে সরবরাহ করা সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
এর ফলে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ভাড়ার মিল রেখে সদরে প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা এবং পৌরসভায় ৩০ টাকা করে এই অ্যাম্বুলেন্স চালানোর নির্দেশনা রয়েছে।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি ৯ মাসে মাত্র ১ দিন ভাড়ায় রোগী বহন করেছে। খরচ বেশি হওয়ায় এই অ্যাম্বুলেন্সের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ নেই। এর ফলে অ্যাম্বুলেন্সটি হস্তান্তরের পর থেকেই রোগী বহন বন্ধ রয়েছে। আবার জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ায় ভর্তুকি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট ও চুয়াডাঙ্গায় আইসিইউ–সুবিধাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্সগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার নজির পাওয়া গেছে। কোটি টাকা দামের সেসব অ্যাম্বুলেন্স দক্ষ জনবলের অভাবে গ্যারেজ বা খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখনো সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ ছাড়া রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রামের অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজে থাকলেও সিলেট ও চুয়াডাঙ্গায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে।
বর্তমানে নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজে অলস পড়ে আছে।
নাটোর শহরের পটুয়াপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর স্ত্রী হৃদ্রোগী। গত মাসে তিনি হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। ওই মুহূর্তে তাঁর জন্য একটা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন পড়েছিল। লোকমুখে শুনে নজরুল ইসলাম সদর হাসপাতাল ও পৌরসভায় যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়, টেকনিশিয়ানের অভাবে তারা ভারতের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে আইসিইউ–সেবা দিতে পারবেন না। পরে তিনি বিকল্প উপায়ে স্ত্রীকে রাজশাহীতে পাঠান। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন, নামেই শুধু তাঁদের জেলায় অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এতে নাটোরবাসীর কোনো উপকার হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জেলার সিভিল সার্জন রোজী আরা প্রথম আলোকে বলেন, আইসিইউ–সুবিধাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার জন্য জেলায় দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাব রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।