পাহাড়ি ঢলে আখাউড়ায় বিকল্প সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ

পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে আখাউড়ায় নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বিকল্প সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার সকালে পৌর এলাকার দেবগ্রামেছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আখাউড়া স্থলবন্দর ও পৌর এলাকার সঙ্গে উপজেলার তিন ইউনিয়নের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ পার হলেও কোনো যান চলাচল করতে পারছে না।

গতকাল সোমবার রাতের কোনো এক সময় পৌর এলাকার দেবগ্রামের ওই সড়ক ভেঙে যায়। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ প্রতিবেদন লেখার সময় সড়কে যান চলাচলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে ৩ ইউনিয়নের ৮০ হাজার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামে বেইলি সেতুর বদলে রড-সিমেন্টের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য পাশে মাটির একটি বিকল্প সড়ক করা হয়েছে। সড়কটি দিয়েই মানুষ ও যান চলাচল করে। রাস্তাটি খুবই দুর্বল ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গতকাল দিনভর ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এর বাইরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে সড়কটি ভেঙে যায়। এতে উপজেলা সদর, স্থলবন্দর ও পৌর এলাকার সঙ্গে মোগড়া, মনিয়ন্দ ও ধরখার ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

দেবগ্রামের বাসিন্দা আকাশ মিয়াসহ তিনজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি আখাউড়ার প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোগড়া, মনিয়ন্দ ও ধরখার ইউনিয়নের ৮৩টি গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। তাঁরা উপজেলা সদর ও স্থলবন্দরে যেতে সড়কটি ব্যবহার করেন। কিন্তু দেবগ্রামে সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ধসে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাধ্য হয়ে সাত কিলোমিটার বেশি ঘুরে মানুষকে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

স্কুলশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘পৌর এলাকার কলেজপাড়ায় আমার বাড়ি। কসবার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করি। সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সাত কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরতে হয়েছে।’

বিকল্প সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল করতে পারছে না। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে যান চলাচলের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগরতলা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি মূলত দেবগ্রামের সেতুর নিচে খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য পাশে তৈরি করা বিকল্প সড়কের নিচ দিয়ে পানি সরার দুটি পাইপ বসানো হয়েছে। ঠিকাদারকে তাঁরা চারটি পাইপ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁরা না শোনায় সড়কটি ভেঙে গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রয়োজনমতো পাইপ দিয়েছিলেন। কিন্তু পানির প্রবাহ বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। দু-এক দিনের মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে হালকা যানের জন্য নতুন সেতু খুলে দেওয়া হবে। আপাতত কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ের কারণে বিকল্প সড়কটির ব্যাপারে তাঁরা সিগন্যাল দিয়েছিলেন। সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দুই-এক দিনের মধ্যে সেতুর ঢালাইয়ের কাজ শেষ করা হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মানুষের চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। এখন পানির স্রোত বেশি থাকায় সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়।