স্থানীয়রা বলছেন ককটেল ‘ফোটেনি’, তবু বিএনপির ৮৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারতা এলাকার এ সড়কে গতকাল রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ। ছবি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৮৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার পর রাতেই বিএনপির চার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলায় সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র, ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৩৮ জনের আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ জনকে।

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক ওরফে বাবু (৪৫), উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন (৫০), পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ওরফে টিপু (৪৫) এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী (৫০)।

আজ বেলা তিনটার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারতা এলাকায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি বাড়ির তিনজন বাসিন্দা বললেন, ‘গত রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আমরা জেগে ছিলাম। আমরা কেউ ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনিনি।’  

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাসেত প্রথম আলোকে বলেন, মামলার এজাহারে রাত ১০টা ২ মিনিটে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেখানো হয়েছে। অথচ ঘটনা ঘটার এক ঘণ্টা আগেই আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, এটি একটা গায়েবি মামলা।

গত রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আমরা জেগে ছিলাম। আমরা কেউ ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনিনি।
ঘটনাস্থলের আশপাশের বাড়ির তিনজন বাসিন্দা

গতকাল রাতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কাহারতা এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়াকে আটক করে পুলিশ। তবে রাত ১১টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাদশা মিয়া বলেন, ‘রাত ৯টায় আমাকেসহ নয়জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমার ভায়রা একজন পুলিশ সুপার। তাঁর ফোনের কারণে পুলিশ আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়।’

সখীপুর থানার এসআই ও মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারতা এলাকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচটি অবিস্ফোরিত ককটেল ও আধা বস্তা পাথর জব্দ করে। এ ঘটনায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ আনুমানিক ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম বলেন, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র, ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতার পরিকল্পনা করায় রাতে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। ওসি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাজু বলেন, সারা দেশেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় যাতে সমাবেশ না হয়, এ জন্য আগে থেকেই তাঁদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীরা সখীপুরে একটি ক্লাবে বিশ্বকাপ খেলা দেখছিলেন। এ সময় বিএনপির চারজনসহ নয়জনকে আটক করা হয়। বাকি পাঁচজন বিএনপির নেতা-কর্মী না হওয়ায় তাঁদের গভীর রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপরাধ না করেও তাঁরা সবাই এখন পালিয়ে আছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সখীপুর থানার এসআই আবদুল করিম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।