তালগাছ লাগিয়ে আলী আকবারের অনন্য নজির
নাম তাঁর আলী আকবর খান। বয়স ৭৪ বছর। ভালো কিছু করার তাড়না থেকে দেড় যুগ আগে তালের বীজ বোনার চিন্তা আসে তাঁর মাথায়। ঘুরে ঘুরে তালের বীজ সংগ্রহে নেমে যান। এভাবে সংগ্রহ করা প্রায় ১৫ হাজার তালবীজ রোপণ করেন তিনি। সেগুলো থেকে চারা হয় প্রায় ৫ হাজার। সময়ের ব্যবধানে বড় হওয়া তালগাছগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের পাশে শোভা বাড়াচ্ছে, ছায়ায় মায়ায় ভরিয়ে রাখছে মানুষকে।
শুরুর দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে আখাউড়ার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর গ্রামের আলী আকবর বললেন, ‘শহর থেকে বস্তায় ভরে তালের আঁটি আনতাম। নিজের পয়সায়। আখাউড়ার আজমপুর রেল বাইপাস থেকে কোড্ডা কেবিন এলাকা, আখাউড়া রেলস্টেশন থেকে কোড্ডা খাঁ বাড়ি পর্যন্ত লাগিয়েছি। প্রায় ১৫ হাজার আঁটি লাগিয়েছি। নিয়মিত দেখাশোনা করেছি। সার-গোবর দিয়েছি। শুরুতে মানুষ ঠাট্টা করত। অনেকে পাগল বলত।’
এখন অবশ্য মানুষ ‘পাগল’ আলী আকবর খানের প্রশংসা করেন। করবেন না–ইবা কেন! আখাউড়ার খড়মপুরে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের পাশে সারি সারি তালগাছ মন ভালো করে দেয় যে কারও। তালগাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন অনেকে। এসব দেখে আলী আকবরের মনটা ভরে যায়। বয়সের কারণে এখন আর নিজে গাছগুলোর দেখভাল করতে পারেন না বলে আক্ষেপও আছে তাঁর।
আলী আকবর খান সবার ভালোর কথা ভেবেই এই কাজ করেছেন বলে জানান আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হান্নান ভূঁইয়া। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, সমাজে ভালো কাজের দৃষ্টান্ত রেখেছেন আলী আকবর।
এত কিছু থাকতে তালগাছ লাগানোর চিন্তা কীভাবে মাথা এল—জানতে চাইলে আলী আকবর খান বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে। তিনি মানুষের জন্য, সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন। দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন এমন কিছু করতে, যাতে মানুষ তাঁকে অনেক দিন মনে রাখে। তখন তালগাছের কথা মাথায় আসে। কচি অবস্থায় তালের আঁশ খাওয়া যায়, পাকা তালের স্বাদ অতুলনীয়, গাছটি ছায়া দেয়, আছে নানা ঔষধি গুণ, বজ্রপাতেও সুরক্ষা মেলে। নিজের তো আর এত জায়গা নেই! তাই বেছে নেন রেললাইনের পাশের সরকারি জায়গা।
আখাউড়া উত্তর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, তালের বীজ রোপণের দুই থেকে তিন বছর পর বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। তখন তিনি অবাক হয়েছিলেন। এখন সময়ের সঙ্গে যখন গাছগুলো বড় হচ্ছে, তখন ভালো লাগছে। রেললাইনের পাশটা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।
আলী আকবরের দুই ছেলে। বড় ছেলে মোবারক আলী মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রভাষক। ছোট ছেলে আলিবর্দী খান ওরফে সোহেল বাড়িতে থেকে পরিবারের দেখাশোনা করেন। ছোট ছেলে বলেন, ‘কেউ যখন তালগাছ কেটে নিয়ে যান, তখন বাবার খুব কষ্ট হয়।’ তিনি আখাউড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে তালগাছগুলো সংরক্ষণের দাবি জানান।
পরিবারের চাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বলেন, তালগাছ এখন বিলুপ্তির পথে। সরকার আলী আকবর খানের লাগানো তালগাছগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে তালগাছ লাগানো নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ। গত জুনে উপজেলা প্রশাসন তাঁকে আর্থিক সম্মাননা জানায়। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি নিজে আসতে পারেননি, ছেলে এসেছিলেন।