বরিশালে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সড়ক, জনজীবনে দুর্ভোগ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে বরিশালে শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি হয়েছে। কখনো ভারী কখনো মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত ছিল। টানা বৃষ্টিতে নগরের রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় থমকে যায় জনজীবন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ঝোড়ো আবহাওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নগরের রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত বরিশালে ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৫৫ কিলোমিটার। বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, রাতে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিতে যাত্রীর পরিমাণ কম থাকায় দূরপাল্লা ও আন্তজেলা বাস চলাচলও সীমিত ছিল। জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো আবহাওয়ার কারণে যাত্রীরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বৈরী আবহাওয়ায় যাত্রী কম থাকায় বাস চলাচলও সীমিত করতে হয়েছে তাঁদের।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর রাত থেকে বৃষ্টির গতি কিছুটা বাড়ে। আজ সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি হয়। বিকেল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। টানা বৃষ্টিতে পানি জমে নগরের অধিকাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়।
নগরের বটতলা, নবগ্রাম রোড, বগুড়া রোড, অক্সফোর্ড মিশন, কলেজ রোড, গোরস্থান রোড, ভাটিখানা, সদর রোড, পলাশপুর, হাটখোলা সড়ক ও জিয়ানগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কগুলোতে হাঁটুপানি জমেছে। পথচারী ও যান চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। নগরের অলিগলিতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দারাও বিপাকে পড়েছেন।
নগরের নবগ্রাম রোড, আমির কুটির, অক্সফোর্ড মিশন রোড, কলেজ অ্যাভিনিউ, গোরস্থান রোড, সার্কুলার রোড, ভাটিখানাসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকা জলাবদ্ধ থাকায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির মধ্যে আছেন। কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকার বাসিন্দা অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পানি জমে যায়। আমাদের জীবন এখন এত দুর্বিষহ বলে বোঝাতে পারব না।’
নগরের গোরস্থান রোডের বাসিন্দা ও বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, বাড়ির চারপাশ জলাবদ্ধ। বের হওয়ার উপায় নেই। ১০ বছর ধরে নগরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট। সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সড়ক ও অলিগলিতে হাঁটুপানি জমে যায়। জনপ্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো সমাধান করেননি। তিনি বলেন, নগরের ভেতরে ২৪টি খাল দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। কিছু খাল ভরাট করে নালা ও ভবন তৈরি করা হয়েছে। যে কয়েকটি খাল অবশিষ্ট আছে, সেগুলোতেও পানির প্রবাহ নেই। জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করতে হলে খালগুলো খনন করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে দিনভর বৃষ্টি, জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। রূপাতলী এলাকার রিকশাচালক আবুল কালাম বলেন, সকাল থেকেই ঝড়–বৃষ্টি। পেটের দায়ে এমন আবহাওয়ার মধ্যেও তিনি বাইরে বের হয়েছেন। কিন্তু বেলা দুইটার সময়েও তিনি ১০০ টাকা রোজগার করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সকালে দু-একজন যাত্রী পেয়েছি। কিন্তু দুপুরের পর এত বেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে রাস্তায় একজনও যাত্রী পাচ্ছি না। শহরের বেশির ভাগ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক রাস্তায় হাঁটুর বেশি পানি জমেছে।’
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বৃষ্টির পানি যেন আটকে না থাকে, সে জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন। দ্রুত পানি অপসারণে তাঁরা নালাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করছেন। কোথাও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা সরিয়ে দিচ্ছেন। নালাগুলো প্রতিদিন পলিথিনে আটকে যায়। ফলে পানি নিষ্কাশনে বাধা পায়। সেগুলো অপসারণ করে পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে।