পঞ্চগড়ে তাড়া করে আহত নীলগাই ধরলেন গ্রামবাসী
ভরদুপুরে খেত থেকে পাকা মরিচ তুলছিলেন কয়েকজন নারী। এ সময় পাশের একটি ভুট্টাখেতে দেখতে হরিণ কিংবা ঘোড়ার মতো একটি প্রাণী দেখে চিৎকার করে ওঠেন তাঁরা। তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ভুট্টাখেতের ভেতরে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে ছোটাছুটি শুরু করে প্রাণীটি। পরে বেশ কিছুক্ষণ তাড়া করে প্রাণীটিকে ধরে ফেলেন তাঁরা। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা উদ্ধারের পর প্রাণীটি নীলগাই বলে নিশ্চিত হন।
পরে বেলা পৌনে দুইটার দিকে আহত নীলগাইটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মীরা একটি ভ্যানে করে পঞ্চগড় বন বিভাগ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিচ্ছেন নীলগাইটিকে।
আজ রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের সরকারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নীলগাইটি সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে প্রাণীটির মুখ, মাথা, পা–সহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সরকারপাড়া এলাকায় ভুট্টাখেতে ছোটাছুটি করছিল প্রাণীটি। এ সময় পাশের মরিচখেতে মরিচ তোলা নারীরা এটিকে হরিণ বা ঘোড়া ভেবে চিৎকার করে লোকজনকে ডাকাডাকি শুরু করেন। তাঁদের ডাকাডাকিতে স্থানীয় লোকজন এসে প্রাণীটির পিছু নেন। এ সময় একটি ভুট্টাখেত থেকে আরেকটি ভুট্টাখেতে ছুটছিল প্রাণীটি। ধীরে ধীরে উৎসুক লোকজন বাড়তে থাকলে শতাধিক মানুষ প্রাণীটির পেছনে ছুটতে থাকেন। পরে তাঁরা প্রাণীটিকে ধরে ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে আসেন। স্থানীয় লোকজন প্রাণীটিকে আহত দেখতে পেয়ে ক্ষতস্থানগুলোতে ওষুধ লাগিয়ে দেন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দেন। এরই মধ্যে পঞ্চগড় বন বিভাগের কর্মীদের খবরও দেওয়া হয়। বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে গিয়ে একটি ভ্যানযোগে প্রাণীটিকে তাঁদের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
রবিউল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, ‘প্রথমে কেউ হরিণ আবার কেউ ঘোড়া বলে চিল্লাচ্ছিল। ধরা পড়ার পর বন বিভাগের লোকজন এসে প্রাণীটি নীলগাই বলে জানায়। পরে বন বিভাগ প্রাণীটি নিয়ে গেছে। আমাদের সরকারপাড়া এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে ভারতের সীমান্ত। মনে হচ্ছে, এটি ভারত থেকে এসেছে। প্রাণীটার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ছিল। মনে হচ্ছে, কয়েক দিন আগেই এসব ক্ষত হয়েছে। এ জন্য প্রাণীটা কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে।’
পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভিএফএ) রেজাউল করিম জানান, বন বিভাগ কার্যালয়ে এনে আহত নীলগাইটির প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এটি স্ত্রী নীলগাই, বয়স আনুমানিক দুই বছর। নীলগাইটির পা-সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত হয়েছে। ক্ষতগুলো দেখে মনে হচ্ছে ছয়-সাত দিন আগের। ভারত থেকে কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে এ ধরনের ক্ষত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন বিভাগের পঞ্চগড় সদর উপজেলা বিট কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘গ্রামবাসী একটি নীলগাই ধরেছে, এমন খবর পেয়ে আমরা সেটিকে উদ্ধার করে আমাদের কার্যালয়ে নিয়ে এসেছি। আহত নীলগাইটিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা দেওয়া ও পর্যবেক্ষণের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাণীটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’