এক আঙুলের সংগ্রাম, মাসে আয় ২৫ হাজার টাকা

শারীরিক প্রতিবন্ধি জোবায়ের হোসেন। শনিবার দুপুরে কুমিল্লার কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা নগরের মোগলটুলি এলাকার জোবায়ের হোসেনের (২৩) ছোটবেলা থেকেই হাত–পা অচল। চলাচল করতে হয় হুইলচেয়ারে। কেবল ডান হাতের তর্জনী সচল আছে। সচল সেই আঙুল দিয়েই আউটসোর্সিং (গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ) করে মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।

জোবায়ের হোসেন কুমিল্লা শহরের মোগলটুলি এলাকার এ কে এম মমিনুল ইসলাম ও জেবা ইসলামের ছেলে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ পান এই তরুণ। নিজের আয়ে জোগাচ্ছেন সংসারের ও একমাত্র ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস বয়সে জোবায়ের হোসেনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এর পর থেকে তাঁর হাত ও পা অচল। হুইলচেয়ারে বসে থাকেন। মাথা একবার কাত হলে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া তুলতে পারেন না। কেবল ডান হাতের তর্জনী সচল। ওই এক আঙুলে তিনি কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলের কিছুটা সাহায্য পান। তবে কথা বলতে পারেন।

অন্যের সহযোগিতা নিয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ–৪.৫০ পেয়েছেন। শরীর খারাপ থাকায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তাঁর।

সচল এক আঙুল দিয়ে ২০০৯ সালে বড় ভাই জামসেদ আলমের কম্পিউটারে গ্রাফিক ডিজাইন ও পেইন্টিংয়ের কাজ শিখতে শুরু করেন জোবায়ের। নিয়মিত অনুশীলন করতে করতে তিনি শিখে ফেলেন গ্রাফিকসের কাজ। রকিবুল ইসলাম নামের এলাকার এক বড় ভাই তাঁকে সহযোগিতা করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জুবায়েরকে কাজ এনে দেন তিনি।

প্রথম দিকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে আয় করতেন জোবায়ের হোসেন। এখন তাঁর মাসিক আয় গড়ে ২৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ পাচ্ছেন। এই টাকায় তিনি পরিবারের খরচের অংশীদারও হচ্ছেন।

জোবায়ের হোসেনের বড় ভাই জামসেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোবায়ের বাবা, মা ও বোনকে নিয়ে কুমিল্লা শহরের মোগলটুলিতে থাকে। আমরা বড় দুই ভাই আলাদা থাকি। ও আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে যে টাকা পায়, তা দিয়ে সংসার চালায়। আমাদের একমাত্র ছোট বোন উম্মে আয়মান মারিয়া কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। ওর পড়াশোনার খরচটাও জুবায়ের দেয়। অথচ ও নিজেই হুইলচেয়ারে চলাচল করে। হাত–পা কাজ করে না। ওর কোথাও যাওয়ার দরকার হলে আমরাই নিয়ে যাই।’

গত শনিবার কুমিল্লা অনলাইন প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশনের (কোপা) উদ্যোগে কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরের উত্তর পাড়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে পেশাদারত্ব নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। এতে ফ্রিল্যান্সিং, লিডারশিপ, সমস্যা সমাধান ও যোগাযোগ নিয়ে কথা বলেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। সেখানে অংশ নেন জোবায়ের হোসেন। তাঁকে হুইলচেয়ারে করে সেখানে নিয়ে যান তাঁর বাবা এ কে এম মমিনুল ইসলাম ও বড় ভাই জামসেদ আলম।

জোবায়েরের বাবা এ কে এম মমিনুল ইসলাম বলেন, নিজের আগ্রহে জোবায়ের গ্রাফিকসের কাজ শিখেছে। উপার্জন করে ঘরে বসে। হুইলচেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করে।

ইউটিউব দেখে গ্রাফিকসের কাজ শিখেছেন বলে জানিয়েছেন জোবায়ের হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমার মাসে ভালো টাকা আয় হচ্ছে। যত দিন বেঁচে আছি, কাজ করব। এতে আমি আনন্দ পাই।’

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মুনির হাসান বলেন, ‘একটিমাত্র আঙুল সচল। সেটি দিয়ে কাজ করে জোবায়ের। ওর ইচ্ছাশক্তি আমাকে মুগ্ধ করেছে। গ্রাফিকসের কাজ করে ও ভালো উপার্জন করছে।’