বগুড়ায় বাঙালী নদীর ভাঙনে বাড়ি ও জমি হারাচ্ছেন তিন গ্রামের বাসিন্দারা
আবদুস সাত্তারের ঘর ছিল, বাড়ি ছিল। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নিজস্ব জায়গায় বসবাস করতেন। বাঙালী নদীর ভাঙনে তাঁর বাড়ি নদীর মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। নিজস্ব বসতবাড়ি হারিয়ে তিনি এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
আবদুস সাত্তারের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ি ইউনিয়নের ঘাশুড়িয়া গ্রামে। গ্রামটির উত্তর পাশে প্রবহমান বাঙালী নদী।
শুধু আবদুস সাত্তারই নন; আবদুস সালাম, ময়নাল প্রামাণিক, সুরমান প্রামাণিক, জাহিদুল ইসলামসহ আরও পাঁচজনের বাড়িও অন্তত এক মাস আগে নদীতে বিলীন হয়েছে। তাঁরা সবাই দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আবদুস সাত্তার বলেন, ‘নদী যখন খনন করে, তখনই আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিছিলাম। তারা আমাগারে কথার গুরুত্ব দেয় নাই। এখন আমাগারে বাড়িঘর নদীর মধ্যে চলে গেছে। তাড়াতাড়ি এর সমাধান না করলি গ্রামের অনেকের জমি, বাড়ি নদীর মধ্যে যাইব।’ ভাঙনে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর আবদুস সালাম প্রশাসনের কাছে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
গতকাল রোববার সরেজমিন গিয়ে ঘাশুড়িয়ার গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোহাম্মদ, নূরে আলম, আফছার আলীসহ অন্তত ১৫ জন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের ভাষ্য, তাঁদের গ্রামটি নদীর দক্ষিণ পাশে। নদীর তীরটি আশপাশের জমির তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু। মানচিত্র অনুযায়ী নদীর মূল প্রবাহ ছিল বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তত ৬০০ ফুট উত্তরে। প্রায় এক বছর আগে নদীটি খনন করা হয়।
খননের সময় ঠিকাদারেরা বলেছিলেন, মূল নদীপথে খননই করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নদীর দক্ষিণ পাশে পাড় ঘেঁষে খনন করা হয়। এ নিয়ে গ্রামবাসী বিরোধিতা করেন। জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ গুরুত্ব না পাওয়ায় এখন পুরো গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। গত দুই মাসে ঘাশুড়িয়া ছাড়াও নলুয়া ও সুঘাট ইউনিয়নের চকপাহাড়ি গ্রামও শুষ্ক মৌসুমেই ভাঙনের শিকার হয়েছে। অন্তত ৫০ থেকে ৭০টি পরিবারের বাড়িঘর এখন ঝুঁকিতে।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সুঘাট ইউনিয়নের চকপাহাড়ি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের চারটি ঘরসহ নদীর পাড়ের আরও ১১টি পরিবারের বাড়ি ভাঙনের মুখে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিবারের সদস্যরা বলেন, নদীভাঙনে এখন আশ্রয়টুকু টিকবে কি না, এখন সেই দুশ্চিন্তায় তাঁরা। ভাঙনের প্রভাব পড়েছে সীমাবাড়ি ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামেও। অনেক কৃষকের জমি ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
তিন গ্রামের কৃষকেরা বলেন, সেচযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে পানি তুলে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন তাঁরা। কিন্তু ভাঙনে সেচঘরগুলো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে আগামী মৌসুমের চাষাবাদ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সীমাবাড়ি ও সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি তাঁরা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঞ্জুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নদীভাঙন নিয়ে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানাবেন।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সম্প্রতি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। নদীভাঙনের কারণে ওই তিন গ্রামের মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এ তথ্য তিনি জানেন না। তিনি সরেজমিন ঘুরে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।