বরিশালে ঝড়ে গাছচাপায় বৃদ্ধ নিহত, ২৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, জেলে নিখোঁজ

বরিশালে ঝড়ে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। এতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সদর উপজেলায় আকস্মিক ঝড়ে গাছচাপা পড়ে শেখ মোহাম্মদ রফিক বিহারী (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। ঝড়ে হিজলা উপজেলায় একটি মাছ ধরার নৌকা ডুবে এক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। একই সঙ্গে ঝড়ে একটি ছোট লঞ্চ ডুবে গেলেও কেউ হতাহত হননি। এ ছাড়া হিজলায় ঝড়ে অন্তত ২৫টি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নিহত রফিক বিহারী সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাঢ়ীমহল গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর প্রথম আলোকে বলেন, রফিক বিহারী ফজরের নামাজ আদায়ের পর তাঁর পাকা ঘরের পাশে একটি টিনের কাঁচা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় আকস্মিক ঝড়ে ওই ঘরের ওপর একটি চাম্বল গাছ ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে তিনি মারা যান। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান অক্ষত আছেন।

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায় বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের ওপর দিয়ে আকস্মিক ঝড় বয়ে যায়। সকাল ৬টা ৫৫ মিনিট থেকে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। সকাল ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যায়। বরিশালে আজ ২৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে ঝড়ে মেঘনা নদীতে নৌকা ডুবে মাসুদ রাঢ়ী (১৮) নামে হিজলার এক তরুণ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি উপজেলার চরকিল্লা গ্রামের আবুল কালাম রাঢ়ীর ছেলে।

হিজলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবিদ হাসান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বাবা কালামের সঙ্গে মাছ শিকার করতে মেঘনা নদীতে গিয়েছিলেন মাসুদ। ঝোড়ো বাতাসে তাঁদের নৌকাটি উল্টে গেলে নদীতে পড়ে যান বাবা ও ছেলে। এ সময় বাবাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন অন্য জেলেরা। তবে ছেলে মাসুদ নিখোঁজ আছেন। বিকেলেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ঝড়ে হিজলায় ২৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবিদ হাসান। তিনি বলেন, ঝড়ে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। রাস্তার ওপর গাছ পড়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ আছে।

ঝড়ে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাটে একটি লঞ্চ আংশিক ডুবে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

ঝড়ে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ে। গাছ পড়ে হাসপাতাল চত্বরে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ভেঙে গেছে হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি)।

এদিকে ঝড়ের কারণে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাটে একটি লঞ্চ আংশিক ডুবে গেছে। লঞ্চটি হিজলা থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কাজীরহাট এলাকায় পৌঁছানোর পর লঞ্চটির নিচের অংশ ফেটে দ্রুত কিনারে নোঙর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। লঞ্চে থাকা ১৬ জন যাত্রী নিরাপদে আছেন।

মেহেন্দীগঞ্জের কাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়ের আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এমভি ইনজাম নামের ছোট ওই লঞ্চটি সকালে হিজলার টেক বন্দর ঘাট থেকে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী নিয়ে কাজিরহাটের লতা ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখান থেকে বরিশাল নৌবন্দরের উদ্দেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লতা ঘাটে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়। এ সময় লঞ্চটিকে পূর্ব ভাঙ্গাসংলগ্ন নদীর চরে উঠিয়ে দেন চালক। এরপর যাত্রীরা লঞ্চ থেকে নিরাপদে নেমে যান। কিছুক্ষণ পর ঝড় শুরু হলে লঞ্চটির একটি অংশ কাত হয়ে ডুবে যায়।

এমভি ইনজাম লঞ্চের সুকানি নিজাম জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হিজলা থেকে ১৬ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড় শুরু হয়। এ সময় লঞ্চের তলা ফেটে যায়। তাই দ্রুত নোঙর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেন তাঁরা। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সবাই নিরাপদ আছেন। বর্তমানে আংশিক ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারে কাজ চলছে।

বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিৎ সরকার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝড়ে বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা এখনো পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাইনি।’