দিরাইয়ে ‘এমপির নাম ভাঙাচ্ছেন’ এক চেয়ারম্যান প্রার্থী, অভিযোগ অন্যদের

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী প্রদীপ রায়
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রদীপ রায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) জন্য বরাদ্দের টাকায় উন্নয়ন করবেন—এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বলে অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

প্রদীপ রায় দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত।

প্রদীপ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রদীপ রায় সংসদ সদস্যের ‘ঘনিষ্ঠজন’—এটাকে সামনে এনে নির্বাচিত হলে বরাদ্দের টাকায় বেশি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন। রাস্তাঘাট করে দেওয়াসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রদীপ রায়।

আর সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা বলেছেন, উন্নয়ন নিয়ম অনুযায়ী হয়। নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর প্রতি তাঁর সহানুভূতি নেই। প্রদীপ রায়ের সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি।

তবে একই অভিযোগে এর আগে নির্বাচন কার্যালয়ে মুচলেকা দিয়েছেন প্রদীপ রায়। তাঁকে এ বিষয়ে কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন।

দিরাই উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের। অন্যজন বিএনপির। প্রদীপ রায় ছাড়া অন্যরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. আজাদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিপা সিনহা, উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও এই উপজেলা পরিষদের সাবেক দুবারের ভাইস চেয়ারম্যান মো. গোলাপ মিয়া। প্রদীপ রায় গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

চেয়ারম্যান প্রার্থী রঞ্জন কুমার রায় বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে না। এতে এমপি-মন্ত্রীদের কোনো প্রভাব না রাখার জন্য দলীয় সভাপতি কঠোরভাবে বলে দিয়েছেন। কিন্তু দিরাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় নিজেকে এমপির লোক হিসেবে উপস্থাপন করে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাপ মিয়া বলেন, প্রদীপ রায় এমপির লোক—এটা এলাকার সবাই জানে। এটাকে প্রচারণায় যুক্ত করে তিনি বিশেষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি নির্বাচিত হলে কাজ বেশি হবে, অন্যরা নির্বাচিত হলে কম হবে—এমন একটা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠে।

অভিযোগের বিষয়ে প্রদীপ রায় বলেন, ‘এসব অভিযোগ ফালতু। আমি কারও কথার জবাব দিতে পারব না। আমি আমার কথা ভোটারদের বলছি। এমপির কথা বলব কেন, এখন আমাকে বিতর্কিত করার জন্য এসব বলা হচ্ছে। নিজেদের অবস্থা ভালো না দেখেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এখন অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগেই তাঁরা প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইের সময় সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি মুচলেকা দিয়েছেন। গতকাল এক প্রার্থী আবার একই বিষয়ে অভিযোগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আচরণবিধি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিরাই উপজেলায় ৮ মে ভোট গ্রহণ হবে।