নেত্রকোনার বাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে সবজি নেই, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষের

বাজারে সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার সকালে নেত্রকোনা শহরের মেছুয়াবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার বাজারে সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচা পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি বাজারে নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয়ভাবে শাকসবজির উৎপাদন কম, এ ছাড়া সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে খেতে শাকসবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কম হচ্ছে। এর ফলে দাম বেড়ে গেছে। তবে আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে খেতে উৎপাদিত নতুন সবজি বাজারে আসতে পারে। তখন দাম কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।

এদিকে সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে তা নেত্রকোনার বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। বিভিন্ন ধরনের মসলাসহ মাছ–মাংসের দামও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

আজ শুক্রবার সকালে শহরের মোক্তারপাড়া সেতুসংলগ্ন ঘুষেরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, জয়নগর এলাকার কামরুল হক নামের এক ক্রেতা এক কেজি বেগুন কিনে কাপড়ের ব্যাগে ভরছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘দেখেন ভাই, ৮০ টাকা দিয়া এক কেজি বেগুন কিনলাম, তা–ও আবার ভালো মানের না।’

পাশের সবজির দোকান থেকে নাগড়া এলাকার কামাল হোসাইন নামের এক ব্যক্তি একটি দেশি লাউ কিনলেন। কামাল বললেন, ‘একটা ছুডু লাউ ১০০ ট্যাহা দাম দিয়া কিনলাম। এইটা ভাবন যায়? আমরার মতো নিম্ন আয়ের মানুষ কী খাইব?’

আজ সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত ঘুষেরবাজার, মেছুয়াবাজার এবং আখড়াবাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শুধু আলু ও পেঁপে ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, টমেটো ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮৫ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, দেশি আলু ৬০ টাকা, বড় আলু ৫২ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, মুলা ৬৫ টাকা, ধুন্দল ৮৫ টাকা, কচুমুখি ৮০ টাকায় এবং মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া লাউ ও চালকুমড়া আকার ভেদে ৭০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। লালশাকের কেজি ৮০ টাকা, মুলাশাক ৬০ টাকা, ডাঁটাশাক ৬০ টাকা, পুঁইশাক ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি সরবরাহ কম ও দাম বেশি থাকায় ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দরদাম করে অল্প করে কিনছেন।

লাল ডিম প্রতি হালি ৫২ টাকা, হাঁসের ডিম ৬৫ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এখনো বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা এবং রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও চড়া। বাজারে কম দামের মাছ বলতে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে কিছুদিন আগেও পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া মাছ পছন্দের ছিল। কিন্তু এগুলো এখন প্রকার ভেদে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে তা নেত্রকোনার বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। শুক্রবার সকালে নেত্রকোনা শহরের মেছুয়াবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

ঘুষেরবাজারে মাছ কিনতে আসা বলাইনগুয়া এলাকার বাসিন্দা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আরিফ মিয়া বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মানুষের অহন বাঁইচ্ছা থাহনই দায়। সারা দিন অটো চালাইয়া খরচ বাদ দিয়া ৫০০ থাইক্কা ৬০০ টেহা পাই। এই টেহা দিয়া চাউল, তেল-মসলা কিনার পরে তরকারি ও মাছ কিনার টেহা থাহে না। অহন এক সপ্তাহেও পাঙাশ মাছ কিনতে কষ্ট হয়। একবার দাম বাড়লে আর কমে না। কমলেও দুই চার টেহা কমে।’

মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আনিসুর রহমান বলেন, বাজারে এখন শাকসবজি খুবই কম। গত দুই সপ্তাহে শাকসবজির দাম আরও বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ৬০ টাকা কেজি দরে বেগুন কিনেছিলেন। এখন ৮০ টাকার নিচে কোনো বেগুন নেই। সরকার ডিম, আলু, পেঁয়াজসহ কিছু জিনিসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও নেত্রকোনায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

আনন্দবাজারের সবজি বিক্রেতা রিংকু সরকার বলেন, প্রায় ১৫ দিন ধরেই শাকসবজির দাম বেশি। আড়ত থেকে তাঁদের বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে। এর ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

নেত্রকোনায় সারা বছর প্রায় ৭৫ শতাংশ সবজি বাইরের জেলা থেকে আসে বলে জানান ছোটবাজার সুপার মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া। তাঁর ভাষ্য, দুই সপ্তাহ আগে প্রচুর বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন কম। তাই মোকামে সরবরাহ করা সবজির দাম কিছুটা বেশি। তবে আশা করা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বাজার করতে আসা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নেত্রকোনা জেলা শাখার সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, বাজারে অবশ্য আগের চেয়ে শাকসবজির সরবরাহ কম। তবে বিভিন্ন দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা দরকার।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ান, তবে তা অন্যায়। প্রশাসন মাঝেমধ্যে বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং করে থাকে।