‘একটা ঘরের জন্যি সবার কাছে গেছি, কেউ তো কথা রাখল না’

জীর্ণ এ ঘরেই থাকেন বেবি বেগম ও তাঁর স্বামী লেয়াকত ঢালী। সম্প্রতি খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের পাশে কপোতাক্ষ নদের চরে
ছবি: প্রথম আলো

খড়, গোলপাতা আর কিছু পলিথিনে জোড়াতালি দেওয়া ঘরের ছাউনি। মাটির দেয়ালটিও ভেঙে পড়েছে কয়েক জায়গায়। খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের পাশে কপোতাক্ষ নদের চরে জীর্ণ একটি ঘরেই থাকেন লেয়াকত ঢালী ও বেবি বেগম দম্পতি। নদের চরেই ছয় বছর কেটে গেছে দরিদ্র নিঃসন্তান এই দম্পতির।

কপোতাক্ষ নদের লোনা পানির সঙ্গে তাঁদের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক। কেননা, এই নদই তাঁদের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। নদে মাছ ও কাঁকড়া ধরে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে খাবারটুকু জোটে। একটি সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে কেবল সময় আর শক্তিই খরচ হয়েছে, লাভ হয়নি এক ফোঁটাও। বেবি বেগম বলেন, ‘খেয়ে না খেয়ে চলছি। একটা ঘরের জন্যি সবার কাছে গেছি। সবাই কয় হবেনে, কিন্তু কেউ তো কথা রাখল না।’

এখন কপোতাক্ষ নদই যেন তাঁদের জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদের বহুরূপী আচরণে কখনো কখনো কপোতাক্ষকে রাক্ষস মনে হয় বেবি বেগমের। কারণ, তাঁদের শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও গিলে খাওয়ার জন্য নদের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তাদের জীর্ণ কুঠিরে। ঘরের পেছনের নদের লাগোয়া অংশটি ভেঙে যায় যায় অবস্থা। কিছুদিন আগে নদের জোয়ারের তাণ্ডবে ভেঙে গেছে মাটির তৈরি শৌচাগার। বাধ্য হয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে নদের চরেই সারতে হচ্ছে শৌচাগারের কাজ। বহুবার অনেক সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা সাহায্য দেবে বলে তালিকাভুক্ত করতে তাঁদের কাছে এসেছেন। কিন্তু সেসব তালিকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।

বেবি বেগম বলেন, ছোট্ট এ ঘরে দুজন থাকার মতো অবস্থা নেই। ঝড়বৃষ্টির সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টিতে পানি ঢুকে। আর শীতের সময় নদের শীতল বাতাসে শীতে অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেকেই এসে শুধু তালিকায় নাম লেখেন, কিন্তু একটি ঘর কিংবা কোনো সহযোগিতা করেন না কেউ। আক্ষেপ করে বেবি বেগম আরও বলেন, ‘আমাদের আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নাই। স্বামী-স্ত্রী দুজন নদে জাল দিয়ে মাছ ধরি। তাতে যা রোজগার হয়, তা–ই দিয়ে কোনোভাবে ডালভাত খেয়ে আছি।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, অসহায় পরিবারটির খুব বেশি চাহিদা নেই। সামান্য একটু জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই চান তাঁরা। এসব অসহায় মানুষের জন্য দ্রুত কিছু করতে না পারলে প্রতিদিন বেবি বেগমদের লাইন আরও দীর্ঘ হবে।