সিফাতের শরীরে শতাধিক ছররা গুলি, সব সময় যন্ত্রণা করে

সিফাত হাসানের শরীর থেকে কয়েকটি গুলি বের করেছেন চিকিৎসকেরা। এখনো তাঁর শরীরে অসংখ্য গুলি রয়েছে। সম্প্রতি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামেছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে আহত হন কলেজছাত্র সিফাত হাসান (১৮)। চিকিৎসকেরা তাঁর শরীর থেকে কয়েকটি গুলি বের করেছেন। কিন্তু এখনো তাঁর শরীরে অসংখ্য গুলি রয়েছে। সব সময় তাঁর শরীরে যন্ত্রণা করে। অর্থাভাবে তাঁর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার।

সিফাত হাসান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। সিফাত সুন্দরগঞ্জের বাজারপাড়া কারিগরি স্কুল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি গ্রাফিকসের কাজ শিখতে রংপুর যান। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তিনি নগরের খলিফাপাড়া এলাকায় একটি মেসে ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই সিফাত গুলিবিদ্ধ হন।

নজরুল ইসলাম সুন্দরগঞ্জের কুশটারী এম এইচ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক; মা শেফালী বেগম গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সিফাত মেজ। বড় ভাই শাহজালাল মিয়া সদর উপজেলার রেবেকা হাবিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর। ছোট বোন ফাতেমা আক্তার দশম শ্রেণিতে পড়ে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। এরপর রংপুরসহ দেশব্যাপী আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। সিফাত ১৯ জুলাই রংপুরে মিছিলে অংশ নেন। বিকেল চারটার দিকে মিছিলটি রংপুর জিলা স্কুলের সামনে পৌঁছলে পুলিশ ছররা গুলি ছুড়তে থাকে। এতে সিফাতের মাথা, দুই হাত ও পিঠে শতাধিক গুলি লাগে। অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর শরীর থেকে ১২টি গুলি বের করা হয়। বর্তমানে সিফাতের মাথার পেছনে ৫টি, ডান হাতে ১টি, বাঁ হাতে ১টি ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রায় ১০০টি গুলি রয়েছে।

সিফাত হাসান বলেন, ‘শরীরের ভেতরে থাকা গুলি সব সময় চুলকায় ও অসহ্য ব্যথা-যন্ত্রণা করে। মাথা সব সময় ঝিমঝিম করে। পড়াশোনা করতে পারছি না। যন্ত্রণার কারণে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। বসে থাকতে ও শুয়ে থাকতে অস্বস্তি লাগে। তাই উন্নত চিকিৎসা দরকার। টাকা পাব কোথায়?’

নজরুল ইসলাম জানান, তাঁর সামান্য বেতনের চাকরি; কোনোমতে সংসার চলে। ছেলের চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। অনেক ধারদেনা হয়েছে। তারপরও ছেলের শরীর থেকে সব গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই অবস্থায় গুলি বের করতে গেলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই সব গুলি বের করা হয়নি। আহত ছেলের প্রতিদিনের ওষুধ কেনা, মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

অনেক হাসপাতালে ঘুরেছি। কেউ সব গুলি বের করার সাহস পায়নি। অনেকে ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। ছেলের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে বিপাকে আছি।
নজরুল ইসলাম, আহত সিফাত হাসানের বাবা

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের অনেক হাসপাতালে ঘুরেছি। কেউ সব গুলি বের করার সাহস পায়নি। অনেকে ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। ছেলের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে বিপাকে আছি। ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলাম। ’

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, ইতিমধ্যে সিফাত হাসানকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে আরও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধার সমম্বয়ক (ছাত্র প্রতিনিধি) মাসুদ রানা জানান, জেলায় আহতদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে সবাই জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পাবেন।