পণ্য নিয়ে বক্সে টাকা রেখে যান ফরিদের দোকানের ক্রেতারা

নিজের দোকানে ফরিদ হোসেন। সম্প্রতি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব মাটিভাঙ্গা বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদ হোসেনের বয়স ৪০ ছুঁয়েছে। দুই হাত ও পায়ে সমস্যা থাকায় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, কাজ করতে পারেন না। তবে ছোট একটি দোকান চালান ফরিদ। তাঁর এই দোকানে যেসব ক্রেতা আসেন, তাঁরা প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে নির্দিষ্ট বক্সে টাকা রেখে চলে যান।

ফরিদ হোসেনের দোকানটির অবস্থান পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব মাটিভাঙ্গা বাজারে। মাটিভাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবদুল বারেক ও রওশন আরা দম্পতির চার ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে ফরিদ হোসেন তৃতীয়। তাঁর দোকানে রয়েছে বিস্কুট, চকলেট, চিপস, কলা, জুসসহ নানা পণ্য। এসব কেনাবেচা করেই জীবন চলে ফরিদের।

পরিবারের সদস্যরা জানান, জন্মের পর থেকে ফরিদ হোসেন চলাফেলা করতে পারেন না। উচ্চতাও ছিল কম। মা–বাবা ফরিদকে পাঁচ বছর বয়সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর তাঁরা কোলে করে ছেলেকে বিদ্যালয়ে যাওয়া–আসা করতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ফরিদ হোসেন পড়াশোনা করেন। পরে মা রওশন আরার চেষ্টায় বাড়ির পাশে পূর্ব মাটিভাঙ্গা বাজারে ফরিদ হোসেন একটি ছোট দোকান দেন। প্রথমে মা–বাবার কোলে করে বাড়ি থেকে দোকানে যাতায়াত করতেন ২৬ ইঞ্চি উচ্চতার ফরিদ। পরে সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে ফরিদ হোসেনকে একটি হুইল চেয়ার দেওয়া হয়। এখন হুইল চেয়ারে করে দোকানে আনা–নেওয়ার কাজটি করেন মা ও বাবা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ব মাটিভাঙ্গা বাজারে ফরিদ হোসেন দোকানে বসে কেনাবেচা করছেন। হাত দিয়ে কাজ করতে না পারায় ক্রেতারা নিজেরা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে দোকানে থাকা একটি বক্সে টাকা রেখে যাচ্ছেন।

ফরিদ হোসেন বলেন, ‘হাত–পা অচল হওয়ায় মা–বাবার সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারছি না। দোকানের পণ্য ক্রেতারা নিয়ে নিজেরা টাকা রেখে দেন। প্রতিদিন দোকানের পণ্য বিক্রি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়। ওই টাকা দিয়ে কোনোরকমে চলে যাচ্ছে।’

ফরিদের মা রওশন আরা বলেন, তাঁরা দরিদ্র মানুষ। সাধ্যমতো ফরিদকে চিকিৎসা করিয়েছেন। ছেলেকে আত্মনির্ভর করার জন্য দোকান করে দিয়েছেন। তাঁরা ছেলেকে কোলে করে প্রতিদিন দোকানে নিয়ে যেতেন। পরে সরকার থেকে একটি হুইল চেয়ার পেয়েছেন ফরিদ। ওই চেয়ারে বসিয়ে তাঁকে দোকানে দিয়ে আসেন। অভাব থাকলেও ছেলেকে ভিক্ষা না করিয়ে ছোট একটি দোকান দিয়ে দিয়েছেন, যাতে ব্যবসা করে আয় করতে পারে।

উপজেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ফরিদ হোসেন প্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষা না করে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বৃদ্ধ বাবার সংসারে বোঝা না হয়ে আয় করে যাচ্ছেন। তিনি অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারেন।