ভেতরে চলছিল এসএসসি পরীক্ষা, বাইরে ছাত্রলীগের কর্মিসভার সাজসজ্জা

বিদ্যালয়ের কক্ষে যখন পরীক্ষা চলছিল, তখন মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেলের সাজসজ্জার কাজ করছিলেন কয়েকজন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা বিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্রলীগের কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে জীববিজ্ঞান ও অর্থনীতির পরীক্ষা শুরু হয়। কক্ষের ভেতরে যখন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন ১৪৪ ধারা ভেঙে বিদ্যালয়ের মাঠে চলছিল মঞ্চ ও প্যান্ডেলের সাজসজ্জার কাজ।

কেন্দ্রের মূল ফটকে কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তিনি ছিলেন নির্বিকার। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন কর্মসূচির আয়োজন করায় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও ছিলেন অসহায়।

কেন্দ্রসচিব বলছেন, পরীক্ষার পর বিকেল চারটায় কর্মিসভা আয়োজনের কথা জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু আগের রাতে তাঁর অগোচরে বিদ্যালয়ের মাঠে শামিয়ানা টানানো হয়। পরীক্ষার দায়িত্ব পালনের সময় কাউকে না জানিয়ে ডেকোরেটরের লোকজন মালামাল এনে সাজসজ্জার কাজ শুরু করেন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভ্যান বোঝাই করে চেয়ার ঢোকানো হচ্ছে ভেতরে। বিদ্যালয়ের প্রহরী নিজেই মূল ফটক খুলে দেন। ফটকে পুলিশের একজন কনস্টেবল দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি সাজসজ্জার সামগ্রী ঢুকতে কোনো বাধা দেননি। ভ্যানচালক জাহিদুল ইসলাম যখন চেয়ারগুলো সাজাচ্ছিলেন, তখন অফিস কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন্দ্রসচিব। ভ্যানচালক জাহিদুল বলেন, সরকারি দলের অনুষ্ঠান। তাই ডেকোরেটর মালিক তাঁকে পরীক্ষা চলাকালীন মালামাল নিয়ে পাঠিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বিকেল চারটায় সারিয়াকান্দি উপজেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত কর্মিসভার উদ্বোধন করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম।

পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাকী মো. জাকিউল আলম বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম পরীক্ষার পর দলীয় কাজে মিলনায়তন ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। তাঁরা আগের রাত থেকে মাঠে সাজসজ্জার কাজ করবেন, সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, ১০টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কেন্দ্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এ সময় কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত লোকজন প্রবেশ করলে সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।

কেন্দ্রের মূল ফটকে দায়িত্বরত কনস্টেবল সামছুজ্জোহা বলেন, কেন্দ্রে একজন উপপরিদর্শকসহ (এসআই) চারজনের দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। কিন্তু সবাই ভিআইপি ডিউটিতে পাবনা যাওয়ায় তাঁকে একা দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এ জন্য সব দিক সামলাতে হয় তাঁকে। এরই ফাঁকে সাজসজ্জার মালামাল নিয়ে ভ্যানগাড়ি ঢুকে পড়ে। সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বিষয়টি জানেন না জানিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।

ওই কেন্দ্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রাজ্জাক উল হায়দার বলেন, কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাঠে সাজসজ্জার কাজ করার বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। কেন্দ্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় বাইরের কারও ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহান সাগর বলেন, ছাত্রলীগের কেউ বেলা তিনটার আগে বিদ্যালয় এলাকায় যায়নি। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হওয়ায় তারিখ পরিবর্তন করা যায়নি। পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে কর্মসূচি না করে অন্যত্র করা যেত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের পরামর্শে সেখানে ভেন্যু করা হয়েছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ের মাঠে মুক্তমঞ্চ আছে। ছাত্রলীগের কর্মিসভা আয়োজনে খরচ সাশ্রয় করতে পরীক্ষার পর সেখানে কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। তা ছাড়া এখন বৃষ্টির মৌসুম। উপজেলার অন্য কোথাও মিলনায়তনের সুবিধা নেই। এ কারণে ওই বিদ্যালয় বেছে নেওয়া হয়। তবে পরীক্ষা চলাকালে কেউ ভেতরে ঢুকে কাজ করলে সেটা ঠিক করেনি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সবাইকে বিদ্যালয়ে ঢোকার কথা আগেই বলা হয়েছে।