সুনামগঞ্জ শহরে একটি ঠেলা ভ্যানে নানা জাতের সবজি সাজিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিক্রি করেন বিচিত্রা বর্মণ (৩০)। শহরে ভ্যান নিয়ে সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে একমাত্র নারী তিনি। আরেকটি কারণে তাঁর ভ্যানের দিকে সবার চোখ যায়। সেটি হলো, ভ্যানে সবজির পাশে বসে থাকে ছোট একটি শিশু। ছয় বছর বয়সী এই শিশু তাঁর একমাত্র ছেলে। ভ্যানে ছেলে আর সবজি ঠেলতে ঠেলতে তিনি ছোটেন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়।
বিচিত্রা বলেন, ‘বাঁচার জন্য ছেলেটারে নিয়া পথও নামছি। জীবনে অনেক দুঃখকষ্ট আছে। ছেলের মুখের দিয়ে চাইয়া সব কষ্ট সহ্য করছি।’ নিজের বেঁচে থাকা আর ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পথে নামা এই মা কারও সাহায্য–সহায়তা চান না, শুধু নিজে কাজটা করে যেতে চান।
বিচিত্রা থাকেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ধোপাখালী এলাকায়। মা ও ছেলে থাকার জন্য ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়েছেন। ভাড়া বাবদ দুই হাজার টাকা লাগে। তাঁর বাড়ি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। সুনামগঞ্জ শহরে সবজির ব্যবসা করছেন তিন বছর ধরে। শহরে কীভাবে এলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বহুত জায়গা ঘুইরা ইকানো আইছি। কপালে টাইন্যা আনছে।’
শহরের মোহাম্মদপুর এলাকায় সম্প্রতি এক দুপুরে কথা হয় বিচিত্রার সঙ্গে। ভ্যানে সবজির পাশে বসে দুষ্টুমি করছিল ছেলে লোকনাথ বর্মণ। বিচিত্রা বলতে থাকেন, আট বছর আগে নেত্রকোনার একজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় থাকতেন। সংসার বেশি দিন টেকেনি। ছেলের বয়স যখন আট মাস, তখন ছেলে ও তাঁকে রেখে স্বামী চলে যান। কিছুদিন বাবা–মায়ের কাছে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরে নানা জায়গায় ঘুরে শহরে এসে ভ্যানে করে সবজি বিক্রির কাজ শুরু করেন।
সারা দিনের কাজের কথা বলতে গিয়ে বিচিত্রা বলেন, সকালে ছেলেকে নিয়ে বের হন। বাজারে গিয়ে সবজি কেনেন। এরপর সেগুলো পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য বের হন। এই পাড়া সেই পাড়া ঘুরে সবজি বিক্রি করেন। দুপুরে সম্ভব হলে খাওয়াদাওয়া করেন, না হলে একেবারে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে খান। পুঁজি কম বলে আয়ও কম জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই মা-ছেলের সংসার চলে, কিছু টাকা বাড়িতে মায়ের জন্য পাঠান।
বিচিত্রা বলেন, ছেলেকে ঘরে রেখে আসবেন, এমন কেউ নেই। তাই সঙ্গে নিয়ে সারা দিন ঘোরেন। তাকে লেখাপড়া করাতে চান। স্বপ্ন দেখেন, একদিন মা–ছেলের দিন ফিরবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘ওই নারী আমার এলাকাতেই থাকেন। খুব পরিশ্রমী। ছোট একটা সন্তানকে নিয়ে সারা দিন শহরে ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করেন। তিনি চাইলে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে তাঁকে সহযোগিতা করা যাবে।’