২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জুলাই-আগস্টের বিপ্লব সফল করতে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে: জোনায়েদ সাকি

বরিশালে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত গণসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন জোনায়েদ সাকি। বৃহস্পতিবার রাতে নগরের অশ্বিনী কুমার হলেছবি: প্রথম আলো

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টের বিপ্লবকে সফল করতে হলে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। এটাই দেশের জনগণ চায়, এটাই জন-আকাঙ্ক্ষা। এটাই হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এই গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন। গণসংহতি আন্দোলন সেই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলে গণসংহতি আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় গণসংলাপে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশে নতুন এক সম্ভাবনার সূচনা করেছে। আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, তার একটি গতিমুখ ঠিক করে দিয়েছে। এই গতিমুখের সঙ্গে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটেছে। এ জন্য ফ্যাসিস্ট শাসনের বিপরীতে নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে প্রয়োজন সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। সেই বন্দোবস্ত বিনির্মাণের জন্য রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আমরা সারা দেশে সংলাপ করছি।’

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, বৈষম্যহীন দেশ গড়তে হলে জনসাধারণের মধ্যে বিরাজ করা বৈষম্য দূর করতে হবে। আমরা বলেছি, জবাবদিহি নিশ্চিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য লাগবে। সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। সংসদ সদস্যরা যাতে দলের আজ্ঞাবহ না হয়ে সংসদে এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরতে পারেন, সে জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাদ দিতে হবে। কারণ, দেশের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যিনিই ক্ষমতায় থাকেন তিনিই সর্বময় ক্ষমতার মালিক বনে যান।’

বিচার বিভাগ নিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মানুষ যাতে বিচার পায়, ন্যায়বিচার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্য বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত করে পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে যাতে ক্ষমতাসীনরা ভয় দেখাতে না পারেন, নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, সে জন্য গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। যদি এই ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্য হয়; তাহলে দেশের সব ধর্ম-মতের নাগরিক তাঁদের অধিকার পাবেন।’

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘বাজারে আগুন, ১০০ টাকার নিচে সবজি নেই। দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। অতীতের সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমাতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা বলতে চাই, উচ্চমূল্য রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। গ্রাম থেকে পণ্য আসতে যে চাঁদাবাজি হয়, চাতাল ও মিল মালিকেরা যে কারসাজি করে ভয়ংকরভাবে দাম বৃদ্ধি করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। মানুষ এই গণ-অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছে বলে আশা করে আছে। মানুষ কিছু বলছে না। কারণ, জনসাধারণ আপনাদের সঙ্গে আছে। তাই কাজ দেখান। কোনো লুটেরাদের কাছে মাথা নত করবেন না।’

গণসংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান ও কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম আমজাদ হোসেন। বরিশাল জেলার সমন্বয়ক দেওয়ান আবদুর রশিদের সভাপতিত্বে সংলাপটি সঞ্চালনা করেন জেলা কমিটির নির্বাহী সমন্বয়ক আরিফুর রহমান। সংলাপে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।