সিলেটে নামতে শুরু করেছে পানি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটে সুরমা নদীর পানি কমেছে। আজ রোববার নগরের কালীঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বৃষ্টি কমে আসায় সিলেটে দুই দিন ধরে পানি নামতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
এদিকে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল শনিবারের তুলনায় আজ এসব পয়েন্টে পানি কমে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসা এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হওয়ার প্রভাব সিলেটের নদ-নদীগুলোয় পড়েছে। এতে পানির স্তর নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে।

দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির ওপর সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করছে। কারণ, ভারতের পাহাড়ি ঢলেই সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ জন্য চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে।  

গতকাল রাতে সিলেটে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ রোববার সকাল ৬টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার তুলনায় ২ সেন্টিমিটার কমেছে। আজ দুপুর ১২টার তথ্য অনুযায়ী নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। গতকাল সন্ধ্যায় নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল।

তবে আজ দুপুর ১২টায় সেটি কমে ১০ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে আজ দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া সারি ও ধলাই নদের পানিও গতকালের তুলনায় আজ সকাল নয়টার কমেছে।

নদ-নদীর পানি কমে আসায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, গতকাল রাতে হালকা বৃষ্টি হলেও এর প্রভাব পড়েনি। নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে। আবার কিছু এলাকায় পানি স্থির অবস্থায় রয়েছে।
অন্যদিকে সিলেটে সকাল থেকে বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘলা রয়েছে। নগরের যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, সেসব এলাকার পানিও কিছুটা কমেছে। কোনো এলাকায় নতুন করে পানি বৃদ্ধি পায়নি।

সুরমা নদীর কমে গেলেও সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানি জমে আছে। আজ রোববার সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় ১৩টি উপজেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। এর মধ্যে আজ সকাল ১০টার হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ৮০৬ জন অবস্থান করছিল। এর আগে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে লোকজন বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। উপজেলাগুলোয় ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে দুটি করে নৌকা রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।