চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করা মামলাটি বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে মামলাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুল হত্যা মামলায় মোট ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এর মধ্যে মামলাটিতে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৭ জন পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত মালামাল ক্রোকের আদেশ, হুলিয়া ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদনও এসেছে। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়েছে।
মো. রায়হানুল ওয়াজেদ আরও বলেন, মামলার ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হবে। অবশ্য আসামিরা মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদনও করতে পারেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে যে অভিযোগ যেভাবে উঠে এসেছে, তাতে আসামিদের বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি আলোচিত মামলা, তাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের চেষ্টা থাকবে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় চলতি বছরের ১ জুলাই পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চিন্ময়ের উসকানি ও নির্দেশে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে আসামিরা পিটিয়ে হত্যা করেন। গত ২৫ আগস্ট আদালত চিন্ময়সহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে হত্যা করা হয়। পরে চিন্ময়কে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনিসহ আইনজীবী হত্যায় কারাগারে আটক রয়েছেন ২২ আসামি। শুভ কান্তি দাশ, রিপন দাশ, পপি দাস, সকু দাস, শিবা দাস, দ্বীপ দাসসহ ১৭ আসামি পলাতক।
মামলার ধার্য দিনে আজ আদালতে হাজির ছিলেন মামলার বাদী ও নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন। তিনি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবরে আবেদন করেছেন। আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তিনি এই আবেদন করেন। জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হোক। আলোচিত এই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির জন্য এত দিনেও সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।