বোরো খেতে মাজরা পোকা, কীটনাশকেও কাজ হচ্ছে না

ধানের কচি শিষ পোকা কেটে দিচ্ছে। এতে শিষ সাদা হয়ে নষ্ট হচ্ছে। কেটে দেওয়া শিষে ধান হবে না। ধানের পাতা একধরনের পোকা ছিদ্র করছে।

পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ধানখেতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন এক কৃষক। গত রোববার বদরগঞ্জ পৌরসভার মেলার মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জে বোরো খেতে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আবাদ মৌসুমের শেষে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগেও পোকা দমন না হওয়ায় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

গত শনিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর, লোহানীপাড়া, কালুপাড়া, রাধানগর, গোপীনাথপুর, দামোদরপুর, মধুপুর, গোপালপুর ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বোরো খেতে গাছ থেকে শিষ বের হয়েছে। অনেক শিষ সাদা হয়ে গেছে। তবে আগাম জাতের কিছু ধান কাটা শুরু হয়েছে।

অন্তত ৩০ জন কৃষক বলেন, বোরো চাষের জন্য এবার আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে। বেশ কিছু দিন ধরে চলছে তীব্র খরা। এ কারণে অতিরিক্ত পানি সেচ দিয়ে আবাদ রক্ষা করতে হয়েছে। এতে খরচ পড়েছে বেশি। ধানগাছ থেকে শিষ বের হওয়ার সঙ্গেই হঠাৎ মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ধানের কচি শিষ পোকা কেটে দিচ্ছে। এতে শিষ সাদা হয়ে নষ্ট হচ্ছে। কেটে দেওয়া শিষে ধান হবে না। এ ছাড়া ধানের পাতা একধরনের পোকা ছিদ্র করছে।

দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ী গ্রামের কৃষক ওবায়দুল হক (২৮) বলেন, ‘এবার বৃষ্টির দেখা নাই। পানি সেচ দিয়া ধানের আবাদ টিকি থুচি। খরচ বেশি পড়লেও লস হইত না। কিন্তুক আবাদের শেষ সমায়ে আসিয়া হঠাৎ ধানের শিষ কাটি দেওচে পোকা। তাতে করি শিষ সাদা হয়া যাওচে। পাঁচ বিঘা মাটিত তিনবার আট হাজার টাকা খরচ করি কীটনাশক স্প্রে করিয়াও পোকা সারোছে না। মনে হওচে এ্যালা বুজিক পোকাও বিষ হজম করি ফেলাওছে।’

বদরগঞ্জ পৌরসভার মেলার মাঠের পাশে বোরো খেতে গত রোববার বিকেলে নাওপাড়া গ্রামের কৃষক রোকনুজ্জামান কীটনাশক ছিটাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এত কষ্ট করি ধানের আবাদটা করনো কিন্তুক শ্যাষ সমায়ে আসিয়া বিপোদোত পড়ি গেছি। ধানের শিষ পোকা কাটি দেওচে। ১০ কাটা মাটির ধানোত ১৫ দিনে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ করি তিনবার বিষ দেনো তাও পোকা সারোছে না। শিষ খালি কাটোওচে। এ্যালা ধানের আবাদকোনা নিয়া খুব টেনশনোত আছি। আবাদ না হইলে ভাত পামো কোনটে?’

আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন, তৈয়ব আলী, আবদুর রাজ্জাক, ছাইফুল ইসলাম, শাহাজান আলী, আমিনুল ইসলাম, মধুপুরের কৃষক ইয়াছিন আলী, নবির উদ্দিন, সন্তোষ কুমার রায়, আমিরুল ইসলামের বোরো খেতেও মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে বলে জানান তাঁরা।

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, মূলত এই সময়ে ধানগাছে মাজরা পোকার আবির্ভাব ঘটে। জমিতে ধান লাগানো ও ওষুধ প্রয়োগে বিলম্ব হওয়ায় কিছু কৃষকের জমিতে মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে। পোকা দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শতকপ্রতি দুই লিটার পানিতে প্রকারভেদে ৩ থেকে ৪ গ্রাম কীটনাশক ওষুধ মিশিয়ে বোরো খেতে স্প্রে করলে পোকা দমন হবে।