ইজতেমা মাঠে ৭২টি যৌতুকবিহীন বিয়ে

বিয়ে শেষে মঞ্চ থেকে নামার পর খেজুর খাওয়ানো হচ্ছে বরকে। শনিবার বিকেলে ইজতেমা মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

একে একে ইজতেমার মূল মঞ্চে উঠলেন ৭২ জন বর। কনের পক্ষে বাবা কিংবা ভাই। কোনো সাজ নেই, নেই আয়োজন। মঞ্চের সামনে হাজারো মুসল্লি। এর মধ্যেই মঞ্চে মাওলানা মাইকে পাঠ করলেন একেক বর ও কনের নাম। ঘোষণা দিলেন দেনমোহরের। প্রকাশ্যে কবুল বললেন বর আর কনের পক্ষে বাবা দিলেন সম্মতি। সম্পন্ন হলো বিয়ে। দুটি মন এক হওয়ার সন্ধিক্ষণে সাক্ষী হলেন হাজারো মুসল্লি।

এ চিত্র শনিবার বিকেলের গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরের ইজতেমা মাঠে। বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা জুহাইরুল ইসলাম। পরে ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হাজারো মুসল্লিকে নিয়ে দোয়া করা হয় সদ্য বিবাহিত বর ও কনের জন্য। বিতরণ করা হয় খেজুর।
বিয়ে শেষে মঞ্চ থেকে নামছিলেন আবু রায়হান। তিনি জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের মেয়ে সাজিদা রহমানকে দেখেন তিনি। পরে ১৪–১৫ দিন আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয় তাঁদের। সাজিদার ইচ্ছা তিনি ইজতেমার মাঠে বিয়ে করবেন। আবু রায়হানও তাতে সম্মতি দেন। পরে দুজনের সম্মতিতেই শনিবার ইজতেমা মাঠে বিয়ে হয়। বর হিসেবে আবু রায়হান নিজে এবং সাজিদার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তাঁর বাবা মো. সোহেল।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। শুক্রবার আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম পর্বের ইজতেমা। এ পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ পর্বের ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। এ পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।

ইজতেমা মাঠে বিয়ের পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু রায়হান প্রথম আলোকে জানান, কেউ ইজতেমা মাঠে যৌতুকবিহীন বিয়ে করতে চাইলে ইজতেমা আয়োজক কমিটির সঙ্গে আগে যোগাযোগ করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ইজতেমার আয়োজকদের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরে তিনি তাঁর নিজের ও কনের নাম–ঠিকানা দিয়ে যান। এরপর শনিবার দুপুরে তিনি ও তাঁর স্ত্রীর পক্ষে আসেন তাঁর শ্বশুর মো. সোহেল। পরে আরও ৭১ জন বরের সঙ্গে ইজতেমার মূল মঞ্চে উঠেন তিনি। মঞ্চের মাওলানা মাইকে তাঁর ও তাঁর স্ত্রী সাজিদা রহমানের নাম–ঠিকানাসহ দেনমোহর ঘোষণা দেন। এ সময় প্রকাশ্যে কবুল বলেন আবু রায়হান। কনের পক্ষে বিয়েতে সম্মতি দেন কনের বাবা। এভাবেই সম্পন্ন হয় বিয়ে।

উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর বহুদিনের ইচ্ছা ছিল ইজতেমা মাঠে লাখো মুসল্লির উপস্থিতে বিয়ে করা। পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সে আমাকে বিষয়টি জানায়। এটা শুনে আমারও ভালো লাগে। এত এত মানুষকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি, এটা ভাবতেই ভালো লাগে।’

সরেজমিন দেখা যায়, ইজতেমা মাঠের বিদেশি কামরার পাশেই তৈরি করা হয়েছে ইজতেমার মূল মঞ্চ। সামনে হাজারো মুসল্লি। মঞ্চে ধাপে ধাপে বক্তব্য দেন বিভিন্ন দেশের মাওলানারা। এর মধ্যেই বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় বিয়েতে আগ্রহীদের। পরে মঞ্চ থেকে মাইকে তাঁদের বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে শেষে মঞ্চ থেকে নামতেই বরদের বরণ করে নেন স্বজনেরা। এ সময় তাঁদের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয় খেজুর। পরে মাঠের সব মুসল্লির নিয়ে সদ্য বিবাহিত বর ও কনের জন্য দোয়া করেন মাওলানা জুহাইরুল ইসলাম।

মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর ইজতেমায় হাজারো মসুল্লির উপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারবাহিকতায় এবারও ৭২টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা আমাদের রেওয়াজ। প্রতিবছরই কিছু বর–কনে অপেক্ষা করেন ইজতেমার জন্য। বিয়েতে অংশ নেওয়া বর ও কনের অভিভাবকসহ সবাই খুব আনন্দিত।’