বাসা ভাড়া নিয়ে অপকর্ম করে আসছিলেন সজীবেরা, মুখ খোলেননি কেউ

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সজীব শেখছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় মিলন হোসেন নামের এক যুবককে হত্যার পর লাশ ৯ টুকরা করে পদ্মার চরে পুঁতে রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সজীব শেখ ও তাঁর সহযোগীরা বাসা ভাড়া নিয়ে নানা অপকর্ম করে আসছিলেন। তবে এ নিয়ে কেউ কিছু বলেননি। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, সজীবসহ কয়েকজন কুষ্টিয়া হাউজিং এলাকার সাততলা ভবনের ছয়তলা ভাড়া নিয়েছিলেন। ওই বাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের। ব্যবসার জন্য অফিস করার কথা বলে বাসাটি ভাড়া নেওয়া হয়।

গতকাল রোববার দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া হাউজিং এলাকার ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, গেটে কোনো দারোয়ান নেই। ডেকেও কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন তাঁদের বিষয়ে জানলেও কেউ কখনো মুখ খোলেননি।

ওই বাড়ির কাছের এক মুদিদোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এ বাসায় অনেকে যাতায়াত করতেন। সবাই কম বয়সী ছেলে। মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম করলেও কেউ কখনো বিষয়টি আমলে নেননি।

আরও পড়ুন

তবে সজীবের পরিবারের দাবি, তিনি মারধরের মতো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কাউকে হত্যা করতে পারেন, এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছে না।

গতকাল শহরের হাউজিং এলাকায় সজীবদের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তাঁর মা, বোন ও স্ত্রীর সঙ্গে।

মা দাবি করেন, ‘আমার ছেলে মারধর-মারামারি করে, এটা ঠিক আছে। তবে হত্যা করতে পারে, এটা বিশ্বাস করি না। তার অনেক শত্রু, কেউ তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তুষারের সঙ্গে (জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি) আমার ছেলে রাজনীতি করে। সে যখন ডাকে, আমার ছেলে চলে যায়। একসঙ্গে বালুঘাটে ব্যবসাও আছে। আমাদের পরিবারের সব খরচও তুষার দেয়। আমাদের বাসায় অনেক ছেলে আসে। সজলও (নিহত মিলনের ব্যবসায়িক অংশীদার ও আসামি) আসতে পারে। নিহত মিলনের সঙ্গে আমার ছেলের কোনো ব্যবসা ছিল না। বন্ধুরা তাকে ডেকে নিয়ে যেতে পারে।’

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেকেই রাজনীতি করে। সজীবও আমার সঙ্গে থাকে। রাজনীতির মিছিল-মিটিংয়ের বাইরে তার সঙ্গে আলাদা কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যে অপরাধ করেছে, তার কঠিন শাস্তি আমিও চাই।’

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, টাকাপয়সার বিষয় নিয়ে মিলন হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে সজীবসহ গ্রেপ্তার ছয়জন স্বীকার করেছেন। এর পেছনে আর কারা আছেন, টাকাপয়সা ছাড়া অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে গত শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পদ্মার চরে অভিযান চালিয়ে মিলন হোসেনের লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বাহিরমাদি গ্রামের মাওলা বক্স সরদারের ছেলে। তিনি স্ত্রী মিমি খাতুনকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই ব্লকে ভাড়া বাসায় থাকতেন। টেক্সটাইল প্রকৌশলে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতেন। গত বুধবার সকালে সজীবের ফোনকল পেয়ে মিলন শহরের ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। ওই দিন সন্ধ্যায় মিলনের স্ত্রী কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

আরও পড়ুন

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই একে অপরের পরিচিত। হত্যার পর লাশ গুম করার সুবিধার্থে ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশ টুকরা টুকরা করা হয়। চারটি মোটরসাইকেলে সাতজন সাতটি পলিথিন ব্যাগের ভেতর লাশের ৯ টুকরা অংশ নিয়ে বের হন। নদীর পাড় থেকে হেঁটে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পদ্মার চরে বালুর ভেতর চারটি স্থানে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন হত্যাকারীরা।