পাটের দাম পাচ্ছেন না চাষিরা

এবার নানা প্রতিকূলতার কারণে পাটের ফলন হয়েছে কম। আবার বাজারে পাটের দাম পাচ্ছেন খরচের কাছাকাছি। কৃষকদের লাভ হচ্ছে না।

জাগ দেওয়া পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন চাষিরা। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পূর্ব ইচলিতে গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরে পাটের দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা। গতকাল শুক্রবার এলাকার হাটবাজারে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। কৃষকেরা বলছেন, এবার নানা প্রতিকূলতার কারণে প্রতি মণ পাট আবাদে খরচ পড়েছে আড়াই হাজার টাকার মতো। যে দাম পাচ্ছেন, তা দিয়ে পোষাবে না। গত বছর প্রতি মণ পাটের দাম এবারের চেয়ে এক হাজার টাকা বেশি ছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর রংপুর জেলায় ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছর ৯ হাজার ৭৬৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এ বছর ৫১৩ হেক্টর কম জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। এবার অসময়ে ঘন ঘন বৃষ্টি ও আগাম বন্যার কারণে চাষিরা জমিতে সময়মতো পাটবীজ বুনতে পারেননি। এর ফলে প্রাকৃতিক কারণে চলতি বছর পাট চাষ কম হয়েছে।

জেলার পাটচাষিরা বলছেন, বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে চৈতালী তোষা ও রবি পাট-১ চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রতি একর জমিতে সাধারণত ৩০-৩২ মণ পাট উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার উৎপাদন হয়েছে ২০ থেকে ২২ মণ। নিম্নমানের বীজ এবং প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পাটের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া এবার পাট ব্যবসায়ীদের পাট না কেনার আগ্রহ কম। হাটে আগে মৌসুমি পাট ব্যবসায়ীদের ভিড় জমত। এবার তাঁরা আসছেন না।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার এ দুই দিনে জেলার বিভিন্ন হাটে প্রকারভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গত বছর পাটের মৌসুমে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছিল।

রংপুর নগরের মাহিগঞ্জ এলাকার মৌসুমি পাট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, বড় পাট ব্যবসায়ীরা এখনো হাটবাজারে নামেননি। তাই তাঁরা পাট কম কিনছেন।

গতকাল জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পূর্ব ইছলি এলাকার কৃষক আবুল কাশেম এ বছর প্রায় দেড় একর জমিতে পাট চাষাবাদ করেছেন। ফলন পেয়েছেন ২২ মণ। গত বছর প্রতি একর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩০ মণ। এবার সময়মতো উন্নত বীজ পাননি। এ ছাড়া অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় এবার পাট উৎপাদন কম হয়েছে। আবার পাট জাগ দেওয়ার সময় বৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই উৎপাদন কম, তার ওপর বাজারে দাম কম। এভাবে হলে আর পাট চাষ করে কী হবে?’

কৃষকেরা বলেন, এবার গড়পড়তায় প্রতি একর জমিতে নিড়ানি বাবদ ২৫ হাজার টাকা, সার ও কীটনাশক ৭ হাজার, পাট কাটা ও আঁশ তোলা বাবদ মজুরিতে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমি চাষাবাদ ও বীজ কেনাসহ আরও কিছু খরচ আছে। সব মিলিয়ে প্রতি একরে খরচ দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা।

মহিপুর এলাকার পাটচাষি নিমাই চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি মণ পাট উৎপাদনে খরচ পড়েছে আড়াই হাজার টাকার বেশি। তবে জ্বালানি হিসেবে পাটখড়িতে লাভ হয় বলা চলে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, পাটের উৎপাদন বাড়াতে আগামী বছর প্রণোদনা দিয়ে চাষিদের উৎপাদন খরচ কমানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে চাষিরা যাতে উন্নত বীজ পান, সে ব্যবস্থা করা হবে।