রাজশাহী মহানগর বিএনপি
সংঘাতে গড়াচ্ছে দুই পক্ষের কোন্দল
মহানগর কমিটির একাংশ সদস্যসচিবকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে অভিযোগ করেছে। এ বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির দুই পক্ষের কোন্দল দিন দিন বাড়ছে। মহানগর আহ্বায়ক কমিটির একাংশ সদস্যসচিবকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে দাবি জানিয়েছে। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়কের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় লোকজন ধাওয়া করে আরেক বিএনপি নেতাকে আটক করে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ওই কমিটির সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদ কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করিয়ে আনেন। তবে দলের একাংশের নেতা-কর্মীর অভিযোগ, দলের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সদস্যসচিব নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের কমিটিতে জায়গা দিয়েছেন। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মামুন-অর-রশীদের লোকজন দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীর সঙ্গেও অসদাচরণ করেন। গত সোমবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে তাঁকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন নেতারা। এর আগেও গত ৬ জুন সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
কমিটির অন্য সবাই সদস্যসচিব মামুনকে বাদ দিতে চান। এদিকে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চলছে নজরুল হুদার বিরোধ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা নগরের রাজারহাতা এলাকায় বসে ছিলেন। সেখানে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী আবু সাঈদ তাঁর ওপর হামলা চালান। তখন নজরুল হুদার অনুসারী ও সাধারণ লোকজন তাঁদের ধাওয়া করে। এ সময় রফিকুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলে লোকজন। মামুন-অর-রশীদের লোক বলে পরিচিত রফিকুল।
এ ঘটনায় নজরুল হুদার পক্ষে শামসুল ইসলাম বাদী হয়ে রাতেই নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অপর দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আবু সাঈদ গুরুতর আহত হন। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনার জেরে রফিকুল ইসলামের পক্ষ থেকে মাইদুল ইসলাম গত মঙ্গলবার রাতে নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি পাল্টা মামলা করেন। এই মামলায় গত বুধবার রাতে নজরুল হুদার সমর্থক সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা নজরুল হুদা বলেন, সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করায় মঙ্গলবার চাকু নিয়ে রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদ তাঁর ওপর হামলা চালান। এতে তাঁর এক হাত কেটে যায়।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে রফিকুলের গত বুধবার জামিন হলেও কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ছাড়া পাননি। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, কমিটির অন্য সবাই সদস্যসচিব মামুনকে বাদ দিতে চান। এটা একটি বিষয়। আর রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চলছে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার বিরোধ। এটা নিয়ে সেদিনের মারামারি কথা তিনি শুনেছেন।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপি এখন বিভক্ত হয়ে আছে। দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে। এ জন্য মামলা হওয়ার পরপরই তিনি দুই পক্ষের আসামি গ্রেপ্তার করেছেন।