বরিশালকে বাসযোগ্য নগরী করতে কামরুলের ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন। আজ শনিবার বেলা দুইটায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে
ছবি: সাইয়ান

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সার্বিক উন্নয়নে ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান ওরফে রূপণ। ওই ইশতেহারে তিনি বরিশাল নগরীকে বাসযোগ্য, জনবান্ধব ও শান্তির নগরে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ শনিবার বেলা আড়াইটায় বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান ইশতেহার ঘোষণার সময় বরিশাল নগরীকে একটি আধুনিক নগর হিসেবে গড়ার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং তাঁর টেবিলঘড়ি প্রতীকে ভোট দিয়ে তাঁকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কামরুল আহসান বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় আমি ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য এবং পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। আমার বাবা বিএনপির নেতা ছিলেন। তাই বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন এবং আমাকে তাঁরা ভোট দেবেন বলে আমি আশা করছি।’

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসানের ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য দফাগুলো হচ্ছে—বরিশালকে সবুজ নগরীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, সাধারণ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি গৃহকর আরোপ না করা ও যাদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে তা পুনর্নির্ধারণ করা, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড ও আধুনিকায়ন করা, প্রতিটি ওয়ার্ডে যথাসময়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ করে নগরকে পরিষ্কার রাখা এবং আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনায় পানি শোধনাগার চালু করা, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে বরিশাল নগরের প্রতিটি খাল দখলমুক্ত করে খননের উদ্যোগ নেওয়া, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা অর্থাৎ নগরের প্রতিটি সড়ক ও ড্রেন জনগণের চাহিদা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বাধুনিক উপায়ে নির্মাণ করা।

কামরুল আহসানের ইশতেহারে আরও যেসব দফা আছে সেগুলো হলো প্রতিটি সড়কে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি স্থাপন করা, নগরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন করা, ইভ টিজিং ও মাদকমুক্ত নগর গড়ার লক্ষ্যে আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, অসচ্ছল নারীদের কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা, ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের সম্মানি বৃদ্ধিসহ পবিত্র মাহে রমজানে নগরের প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা নিশ্চিত করা, বর্ধিত এলাকায় জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাস্তাঘাট, নালা নির্মাণ, সড়কবাতিসহ সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতীয় বীর সন্তানদের পৌরকর ও পানির বিল সম্পূর্ণ মওকুফ করা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান। আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি গত বছর মারা গেছেন। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন আহসান হাবিব কামাল। এর আগে তিনি বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান ও একাধিকবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আজ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রচারকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে কামরুল আহসান বলেন, ‘আমার দুই কর্মীকে শুক্রবার রাতে বিনা অপরাধে কাউনিয়া থানার পুলিশ আটক করেছে। বিকেল পর্যন্ত তাঁরা ছাড়া পাননি। এর আগে আমার আরও তিন সমর্থককে বিমানবন্দর থানায় আটক করে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে শুক্রবার রাতে আমার প্রচারকাজে ব্যবহৃত একটি মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। নানা মাধ্যমে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি জীবন থাকতে নির্বাচন থেকে সরে যাব না।’