সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীসহ ৩২১ জনের বিরুদ্ধে সাভারে হত্যা মামলা

মামলাপ্রতীকী ছবি

ঢাকার সাভারে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদ হোসেন (২৯) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ (৬৭) আওয়ামী লীগের ৩২১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. আলমগীর বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলাটি করেছেন।

তবে বাদী মো. আলমগীরের দাবি, মামলায় উল্লেখিত আসামিদের তিনি চেনেন না। তিনি শুধু দুটি কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে থানায় গিয়েছিলেন। আদালতেও তিনি একই কথা বলবেন বলে জানান।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নিহত সাজ্জাদের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায়। সাজ্জাদসহ তাঁর পরিবার সাভারের কলমায় দক্ষিণ আউকপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস থাকত। তিনি রাজধানীর সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতেন।

মামলায় এনামুর রহমান ছাড়াও সাভার পৌর মেয়র হাজী আবদুল গনি; সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব; সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা; মো. নুরে আলম সিদ্দিকী; রমজান আলী; মশিউর রহমান; ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদ চৌধুরী; ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ওরফে জি এস মিজান; পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানজিদা শারমিন; তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম; সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে সাভার বাসস্ট্যান্ডে যান সাজ্জাদ। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পান আলমগীর। সাজ্জাদ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিই) চিকিৎসাধীন বলে জানতে পারেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আনুমানিক সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা, যাঁদের মামলায় আসামি করা হয়েছে, তাঁরা সাজ্জাদকে লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে মামলার বাদী নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মামলার আসামি ও এজাহারের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গতকাল সকাল ৯টায় থানায় জিডি করতে গেছিলাম। সেখানে লোকজনের অনেক ভিড়। পরে সন্ধ্যায় সাইন নিছে। মামলায় আমি একটা নামও দেই নাই, আমি চিনিও না, জানিও না। থানায় অনেক লোক ছিল। তারা আমাকে বলে, ছেলে হত্যার বিচার চান না! আমি বলছি চাই। পরে দুইটা কপির মধ্যে সিগনেচার করছি। নাম যে এতগুলো দিল, কেডা দিল, কেমনে দিল—এসব বিষয় নিয়া এক্কেবারে অজানা। আদালতেও এই কথাই বলব। গলায় ফাঁসি লাগলেও আমি একই কথা বলব।’

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলমগীরের সঙ্গে অনেক লোকজন ছিলেন। তাঁরা নিজেদের আত্মীয়স্বজন বলে পরিচয় দিয়েছেন। আলমগীর নিজেই এজাহারের কপিতে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি আসামিদের সম্পর্কে জানেন না বা চেনেন না—এমন বিষয় আমাদের তো জানাননি। আমরা ওনার সঙ্গে নিজ থেকেই যোগাযোগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’