মৌলভীবাজারে বনের জমি দখল, গাছ কেটে বিক্রি 

স্থানীয় ১৬ জনের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকায় টিপু চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি প্রায় পাঁচ হাজার গাছ কিনেছেন।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লুয়াইউনি-হলিছড়া চা-বাগানে সম্প্রতি অবৈধভাবে ৪৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বন বিভাগের বরমচাল বিটে বনের বেশির ভাগ জমি স্থানীয় বাসিন্দাদের দখলে চলে গেছে। সেখানে টিলার ওপর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ অবাধে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। গাছ পরিবহনের জন্য টিলা ছেঁটে করা হয়েছে রাস্তাও। বনের জমিতে অবৈধভাবে গাছ কর্তন ও বিক্রির ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি তিনটি মামলা হয়েছে। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভাটেরা হিল রিজার্ভ ফরেস্ট-১ ও ২ অংশে পড়েছে বরমচাল বিটে। ১ অংশটি বরমচাল-করিমপুর চা-বাগান পাকা সড়কের ডানে এবং ২ অংশ বাঁ পাশে পড়েছে। ১৯২৪ সালে স্থানটি সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে স্থানটি জরিপের বাইরে রয়েছে। বরমচাল বিটের আয়তন ১ হাজার ৮৫০ একর। এর মধ্যে প্রায় ৩৫০ একর জমি বন বিভাগের দখলে রয়েছে। বাকিটা স্থানীয় লোকজনের দখলে। এ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে। ওই জমির মধ্যে ইছলাছড়া ও সিংগুরপুঞ্জি নামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া ও গারো সম্প্রদায়ের দুটি গ্রাম রয়েছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ভাটেরা হিল রিজার্ভ ফরেস্ট-২ অংশে বনের টিলাভূমি থেকে অবাধে আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ছোট-বড় গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। টিলার ফাঁকে ফাঁকে কাটা গাছের মোথা পড়ে রয়েছে। কোথাও কাটা গাছ ফেলে রাখা। কোথাও গাছের ডালপালা পড়ে রয়েছে। ট্রাকে করে কাটা গাছ পরিবহন করা হয়। এ কাজের জন্য কিছু স্থানে টিলা ছেঁটে রাস্তাও তৈরি করা হয়। 

বন থেকে ফেরার সময় রাস্তায় বন বিভাগের বরমচালের বিট কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ ও ফরেস্ট গার্ড শাহীন আহমদের সঙ্গে দেখা হয়। অবাধে বনের জমি থেকে গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এখানে বনের জমি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের ঝামেলা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, গাছ কাটার স্থানটি স্থানীয় ১৬ জনের দখলে। তাঁরা ১৬ লাখ টাকায় টিপু চৌধুরী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ বিক্রি করেছেন। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে গাছ কাটানোর কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। পরে বন বিভাগের আপত্তিতে কাজ বন্ধ রাখা হয়। অবশ্য টিপু চৌধুরীর দাবি, স্থানীয় ১৬ জন তাঁদের দখলে থাকা টিলাভূমিতে স্বল্প মেয়াদে গাছের বাগান করেন। তিনি তাঁদের কাছ থেকে শুধু গাছ কিনেছেন। জমি দখলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বন বিভাগের কুলাউড়া কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, ভাটেরা হিল রিজার্ভ ফরেস্ট-২ অংশের অধিকাংশ জমি ইছলাছড়া, সিংগুরপুঞ্জিসহ আশপাশের এলাকার কিছু লোকের দখলে রয়েছে। মামলার কারণে তাঁরা জমি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তবে তিনি যোগদানের পর কয়েকজন দখলদারকে বুঝিয়ে তাঁদের পছন্দমতো উপকারভোগী নির্বাচন করে ২৭ হেক্টর জমিতে ২০২০-২১ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামাজিক বনায়ন করেন।

রিয়াজ উদ্দিন বলেন, অবৈধভাবে গাছ কর্তন ও বিক্রির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে ৯, ১৩ ও ৩১ এপ্রিলে তাঁরা তিনটি মামলা করেছেন। গাছ কর্তন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে টিপু চৌধুরীসহ স্থানীয় কয়েকজনকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবীর মুঠোফোনে বলেন, বনের জমি থেকে অবাধে গাছ কাটার দায় বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।