নারায়ণগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীদের ‘সহযোগী’ হিসেবে সাংবাদিক গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক তুষার আহম্মেদকে (২৮) মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব–১১। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সোর্সের মাধ্যমে বাসা থেকে ডেকে নেওয়ার ১৮ ঘণ্টা পর সোমবার রাতে মাদক মামলার আসামি হিসেবে তুষারকে পুলিশে সোপর্দ করে র্যাব-১১।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, তুষার আহম্মেদসহ চারজনকে সোপর্দ করে র্যাব বাদী হয়ে মাদক আইনে মামলা করেছেন। র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে ৯৭৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় তুষারসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
তুষার আহম্মেদ নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সংবাদচর্চা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পত্রিকাটির সম্পাদক মুন্না খান প্রথম আলোকে বলেন, তুষার মাদক ব্যবসায়ী কি না, তা তিনি জানেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুষার নির্দোষ। স্থানীয় যুগের চিন্তা পত্রিকার সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন র্যাবের সোর্স হিসেবে তুষারকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে র্যাবের কাছে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সোমবার রাতে র্যাব-১১–এর উপপরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার এ কে এম মুনিরুল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহরের দেওভোগ ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯৭৫ বোতল ফেনসিডিলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা হলেন মো. মানিক (৪১), আলতাফ হোসেন (৪৫), তোতা মিয়া (৩৮)। গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়ীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফতুল্লার দাপাইদ্রাকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগী তুষার আহম্মেদকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের আগে তুষারের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অপর চার আসামি শাহাবুদ্দিন (৪২), রাব্বি মোল্লা (২৮), সোহেল (৩০) ও আলম (৩২) পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তুষার আহম্মেদের চাচা শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রাতে তাঁর ভাতিজা তুষারকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান র্যাবের সোর্স স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন। এর পর থেকে তুষার নিখোঁজ ছিলেন। সোমবার দুপুরে তাঁরা জানতে পারেন র্যাব তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তুষার সাংবাদিকতা করেন। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
তুষারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী সোহেলের যোগাযোগ প্রসঙ্গে শহীদুল ইসলাম বলেন, তুষারের শাশুড়ির কাছে সোহেলের মা দুই লাখ টাকা পান। সেই টাকার জন্য রোববার তুষারকে দুইবার ফোন করেছিলেন সোহেল। তুষারকে ধরে নিয়ে র্যাব মাদক মামলায় চালান দিয়েছে।
সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাতে কী হয়েছে, তা তিনি জানেন না। তুষারকে বাসা থেকে ডেকে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
র্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির স্কোয়াড্রন লিডার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে হাতেনাতে সহযোগী তুষার এবং মাদকসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তুষার যতটুকু অপরাধ করেছেন, মামলায় ততটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করার প্রশ্নই ওঠে না। তুষার এ ঘটনার সঙ্গে কতটুকু জড়িত, সেটি তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।