কাল রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ভোটকেন্দ্র ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, লোহাগাড়া ও মিরসরাইয়—এই পাঁচ উপজেলায় থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও র্যাব।
নগর ও জেলার ৩০ জন ভোটারের সঙ্গে আজ শনিবার কথা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিগত ইউপি ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের প্রদর্শন হয়েছিল। গোলাগুলিতে মারা যান পাঁচজন। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর পটিয়া ও সাতকানিয়ায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সে কারণে ভোটাররা দেখেশুনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলছেন।
চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ১৬টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ২৩টি। ভোটার রয়েছেন ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। ১৬টি আসনে মোট ১২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১১ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন; পাশাপাশি থাকবে আনসার ও গ্রাম পুলিশ। এ ছাড়া সাদাপোশাকধারী পুলিশ সদস্যরাও থাকবেন মাঠে।
এবারের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মোট ভোটকেন্দ্রের ৭৫ শতাংশই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এবার ২ হাজার ২৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৮৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসব হলো আগের নির্বাচনে যেসব ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি, সংঘর্ষ হয়েছে; নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে; কেন্দ্রে ভোটার বেশি; ভোটকেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রার্থীর বাড়ি; কেন্দ্রে একাধিক প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করতে পারেন এবং কেন্দ্রটিতে সহজভাবে যাতায়াত করা যায় না ও হেঁটে যেতে হয়।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৩টি পূর্ণাঙ্গ ও ৪টি সংসদীয় আসনের আংশিক অবস্থান নগরে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ায় ভোটারদের শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই বলে জানান নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৪ জন এবং কম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৩ জন করে অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য, ২ জন করে অস্ত্রধারীসহ ১৫ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এর পাশাপাশি মোবাইল টিম, থানা এবং কন্ট্রোল রুমে স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। সোয়াত, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের কে-নাইন ইউনিটকেও স্ট্রাইকিং হিসেবে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকে ভীতিহীন করতে নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত পাঁচ দিনে নগর পুলিশের চার হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
নগরের পাশাপাশি জেলা পুলিশও বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছে। জেলার বাঁশখালী, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও মিরসরাইয়ে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা দরকার, সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। কাউকেই কেন্দ্র দখল করতে দেওয়া হবে না।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের টহল দলও মাঠে রয়েছে বলে জানান র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) নুরুল আবছার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। ভোটের দিনও বাড়তি টহল থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে ১৬টি আসনে প্রতিটিতে ১০ জন করে সরকারি আইন কর্মকর্তা মাঠে থাকবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাঁরা যেকোনো প্রার্থী এবং নির্বাচনের দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনি সহায়তা দেবেন।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে ৩২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাঁরা গতকাল শুক্রবার থেকে মাঠে রয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেওয়া, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশকে ভোটের উপযোগী না রাখা—এসব অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই।