এক কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা, আটক ২

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গতকাল বেলা সোয়া তিনটার দিকে একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রটির নাম মৌটুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এ ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কেন্দ্রটির অবস্থান উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নে। পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের প্রতীক ঘোড়া। সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর লড়ছেন কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে। সকাল থেকে কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দুই প্রার্থীর সমর্থকেরা একজন অপরজনের বিরুদ্ধে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ আনেন। উত্তেজনার মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৭৬১টি। কেন্দ্রটির মোট ভোট ২ হাজার ৬৩৬। ভোট পড়ার হার ২৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বেলা ১টা ৪০ মিনিটে কাপ-পিরিচ প্রতীকের এক এজেন্ট ঘোড়ার প্রতীকের বিরুদ্ধে জাল ভোটের অভিযোগ আনেন। তখন কেন্দ্রের ভেতর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কিছুক্ষণ পর কাপ-পিরিচের বিরুদ্ধে ঘোড়া প্রতীকের এক এজেন্ট একই অভিযোগ আনেন। এই নিয়ে চলা দুই পক্ষের কথা–কাটাকাটির সময় বাইরে থেকে উভয় পক্ষের সমর্থকেরা দা–বল্লম নিয়ে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে পড়ে। তখন এক দল দুর্বৃত্ত একটি ব্যালট বাক্স ও দুটি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ বাক্স ও কিছু পেপার উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, ২টা ১০ মিনিটে আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা বিনতে মতিন সেখানে যান। তাঁরা গিয়ে দেখতে পান, বাক্সটির ঢাকনা ভাঙা। শেষে ৩টা ১৫ মিনিটে কেন্দ্রটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওই সময় দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটক হওয়া দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন ঘোড়া এবং অপরজন কাপ-পিরিচের সমর্থক।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের সমর্থকদের দাবি, বাক্স ছিনিয়ে নিয়েছে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকেরা। শুধু ছিনিয়ে নেয়নি, সিল দিয়ে সেই পেপার বাক্সে রেখে তবেই ফেরত দেয়। তবে কাপ-পিরিচ প্রতীকের এমন দাবি অস্বীকার করে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকেরা বলেন, বাক্স ও পেপার উভয় ছিনিয়ে নেওয়ার সঙ্গে কাপ-পিরিচ প্রতীকের সমর্থকেরা জড়িত।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, দুই প্রার্থীর সমর্থকেরা ভোটের আগের রাত থেকে নানাভাবে তাঁকে চাপে রেখেছিল। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ১৭০টি ব্যালট পেপারও ছিনিয়ে নেয়। সিল মেরে বাক্সে ফেলে। তবে ভোট দেয় ভুল সিল দিয়ে। ফলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এ কারণেই চালুর পর আবার স্থগিত করতে হয়।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন। তিনি বলেন, ‘সিল মেরে বাক্সে ফেলার পর ওই বাক্স দিয়ে ভোট গ্রহণের সুযোগ নেই। এ কারণে স্থগিত করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না।’

ভৈরব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী পাঁচজন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান সাতজন আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।