ঘরে জয়, ঘরেই পরাজয়, বাকিদের জামানত ক্ষয়

সৈয়দা জাকিয়া নূর ও সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

ভোটের মাঠে এবার আলোচনায় ছিল কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন। এই আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আপন দুই ভাই-বোন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর (লিপি)। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান।

সৈয়দা জাকিয়া নূরকে এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে বোনকে চ্যালেঞ্জ জানান বড় ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাফায়েতুল ইসলাম। এ আসনের সংসদ সদস্য কে হবেন, তা নিয়ে চলছিল জল্পনাকল্পনা। একই পরিবারের দুই ভাই-বোনের প্রচারণায় সরগরম ছিল নির্বাচনী মাঠ। ভোটের দিনের আগেও দুই ভাই-বোনের লড়াই ছিল দেখার মতো। দুই প্রার্থীই ভোটারদেরও দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এমনকি নিজেকে যোগ্য দাবি করে একে অন্যের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছেন। অবশেষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ভাইকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন জাকিয়া। যেটাকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, ‘ঘরে জয়, ঘরেই পরাজয়’। তবে এই আসনে অন্য সব প্রার্থী তাঁদের জামানত হারাচ্ছেন।

নৌকার প্রার্থী সৈয়দা জাকিয়া নূর পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৩৪৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৪ হাজার ১৬২ ভোট। ৩ হাজার ১৮৬ ভোটের ব্যবধানে ছোট বোনের কাছে হেরে যান বড় ভাই।

আরও পড়ুন

এ আসনে অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙ্গল) চিকিৎসক মো. আবদুল হাই পেয়েছেন ৪ হাজার ৭০৪ ভোট। গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী (কবুতর) দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক পেয়েছেন ১ হাজার ৭৪৭ ভোট।
বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী (ডাব) মোবারক হোসেন পেয়েছেন ২৪৭ ভোট। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী (আম) মো. আনোয়ারুল কিবরিয়া পেয়েছেন ২১১ ভোট। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী (ছড়ি) মো. আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ১১৪ ভোট। ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) মিনার প্রতীকে মো. আশরাফ উদ্দিন পেয়েছেন ৩৯৮ ভোট।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত বেসরকারি চূড়ান্ত ফলাফল শিটে এখানে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৫। এখানে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৩ হাজার ৯৭৮।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মোট প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ (১২ দশমিক ৫ শতাংশ) ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, সে ক্ষেত্রে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। এখানে মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৫। একজন প্রার্থীর জামানত ফেরত পেতে অন্তত ২০ হাজার ১৯১ ভোট প্রয়োজন ছিল। দুই ভাই-বোন ছাড়া অন্য ছয় প্রার্থীর মধ্যে কেউ জামানত ফেরতের ভোট পাননি। তাই সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

আরও পড়ুন

ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) মিনার প্রতীকের প্রার্থী মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পরাজয় তো পরাজয়ই। যে অনেক ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন তিনিও পরাজিত, আমিও পরাজিত। এর মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখছি না।’

জয়ী প্রার্থী সৈয়দা জাকিয়া নূর বলেন, আসনটি নৌকার ছিল, নৌকারই রয়ে গেল। বড় ভাই সাফায়েতুল ইসলামের প্রতি হৃদ্যতা বজায় থাকবে।