ছায়াবৃক্ষ কেটে নির্মাণ হচ্ছে হাঁটার পথ

ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য সিলেট নগরের সাগরদিঘিরপাড় এলাকায় ছড়ার পাশে থাকা কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। আজ রোববার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের সাগরদিঘিরপাড় ছড়ার (প্রাকৃতিক খাল) তীরে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) নির্মাণের জন্য পাড়ে থাকা গাছ রক্ষা করে নকশা তৈরি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী অনেকগুলো গাছ অক্ষত রেখে প্রথম দফার কাজ শেষও হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় সম্প্রতি কাজ শুরুর পর থেকেই নির্মাণাধীন অংশে থাকা গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। অথচ এসব গাছ রক্ষায় নকশায় ওয়াকওয়ে কিছুটা বাঁকানো হয়েছিল।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ধাপে ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ থেকে মণিপুরি সম্প্রদায়ের শ্মশান পর্যান্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট দীর্ঘ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। এই অংশে পড়েছে ২৩টি গাছ, এর মধ্যে ৩টি পড়েছে ওয়াকওয়ের মধ্যে। ওয়াকওয়েতে থাকা গাছ অক্ষত রাখা হয়েছে। আর বাকি গাছ রক্ষায় ওয়াকওয়ে কিছুটা বাঁকানো হয়েছে।

একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে মণিপুরি শ্মশান থেকে বর্ণমালা পয়েন্টের কিছুটা আগপর্যন্ত ৩৮টি গাছ অক্ষত রেখে ওয়াকওয়ে নির্মাণের নকশা করা হয়। সম্প্রতি দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হলে গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কিছু ছোট গাছ এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এখন কয়েকটি বড় গাছ কাটার কাজ চলছে। কেটে ফেলা গাছের মধ্যে রেইনট্রি, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছিল।
ওয়াকওয়ে নির্মাণের নামে ছায়াদানকারী বৃক্ষ কাটার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন গত দুই দশকে নগর থেকে ছায়াদানকারী শতবর্ষী সহস্রাধিক বৃক্ষ উন্নয়নের নামে উজাড় করেছে। এ অপকর্মের জন্য প্রতিবার আমরা জনপ্রতিনিধিদের তোপের মুখে ফেলেছি। প্রতিবার জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা গাছ রক্ষা করেই হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একই ঘটনা ঘটল সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ে নির্মাণেও। অবশিষ্ট যেসব গাছ এখনো আছে, সেসব অক্ষত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’

গাছের কাটা ডাল পরে ভেঙে গেছে ওয়াকওয়ের রেলিং। আজ বিকেলে সিলেট নগরের সাগরদিঘিরপাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগরদিঘিরপাড় ছড়ার তীরে থাকা রেইন্ট্রি ও কড়ইগাছ কেটে ডালপালা ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক। এর বাইরে পাঁচজন শ্রমিক বড় বড় রেইনট্রি ও কড়ইগাছ কাটার কাজ করছেন। করাত ও কুড়াল দিয়ে এসব গাছ কাটার কাজ চলছে। কেউ কেউ রশি দিয়ে কেটে ফেলা গাছের ডাল টেনে মাটিতে নামাচ্ছেন। এ ছাড়া বেশ কিছু গাছ কাটার জন্য চিহ্ন দিয়েও রাখা হয়েছে। এক অংশে কাটা গাছের ডাল পড়ে সদ্যনির্মিত ওয়াকওয়ের রেলিং ভেঙেও গেছে।
নির্মাণ তদারকিতে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে গাছগুলো কেটে ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে অবশ্য প্রকৃতি রক্ষার জন্য সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসে গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখে নকশা করা হয়। কারণ, গাছ কাটা হলে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি ওয়াকওয়েতে কোনো ছায়াও থাকত না। তাই গাছ বাঁচিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পুনঃনকশা তৈরি করা হয়। প্রথম দফায় গাছ বাঁচিয়েই নির্মাণকাজ করা হয়েছে। এখন চলছে দ্বিতীয় দফার নির্মাণকাজ।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, ছড়ার দুই তীর সংরক্ষণ করে প্রথম ধাপের কাজ শেষে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়েটি মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বসার বেঞ্চ ও স্টিলের সেতু স্থাপন, ফুলবাগান নির্মাণ এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও একই রকম কাজ করা হবে।
যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাছ অক্ষত রেখেই ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা। কেন গাছ কাটা হচ্ছে, এটা খোঁজ নেওয়া হবে।