যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী

ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের। জনবলসংকটে পুরো জেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে।

কুমিল্লা নগরে প্রায়ই সড়কে যানজট লেগে থাকে। গতকাল টমছম ব্রিজ এলাকায়
প্রথম আলো

কুমিল্লা নগরের ২৭টি এলাকায় তীব্র যানজট হয়। এর মধ্যে ১২টি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ আছে। ১৫টি এলাকায় কোনো ধরনের ট্রাফিক পুলিশ নেই। কুমিল্লার প্রত্যন্ত এলাকার ৯টি স্থানে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। এর মধ্যে তিনটি স্থানে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে আছে, অপর ছয়টি স্থানে পুলিশ নেই। এ অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের। জনবলসংকটে পুরো জেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে।

পুলিশের দাবি, জনবলের অভাবে ও যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা মোতাবেক কুমিল্লার জনসংখ্যা ৬২ লাখ। এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে জনসংখ্যা ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৪।

পুরো জেলার মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে অনিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, পায়ে চালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, ঠেলাগাড়ি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মিশুকের সংখ্যা বেশি।

নগরের (১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত) ১৪৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। তার ওপর রয়েছে নিবন্ধিত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ট্রাক, বাস, মিনিবাস, অটোরিকশা। নগরের যেকোনো স্থানে যানজটের চিরচেনা এ দৃশ্য চোখ পড়বে।

সরেজমিনে গতকাল বুধবার নগরের টমছমব্রিজ এলাকায় দেখা যায়, সড়কের মধ্যে শত শত বাহন আটকে আছে। একই অবস্থা লাকসাম সড়কে, কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে, রাজগঞ্জ, চকবাজার, বাদুরতলা, রানীরবাজার, শাসনগাছা এলাকায়ও।

অটোরিকশাচালক কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর বাসিন্দা আবদুল গফুর বলেন, এমন যানজট খুব কম শহরে আছে। এখানে সড়ক চিকন (সরু)। সড়কের মধ্যে ভ্যানে মালামাল বিক্রি হয়। সড়কে মানুষ হাঁটে। ফুটপাত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের দখলে। কোনো নিয়ম নেই।

নগরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া খন্দকার বলেন, ‘প্রাইভেট কার নিয়ে বের হতে পারি না। এত যানবাহন। যে পথেই যাই, শুধু যানজট।’

কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লার ১৭ উপজেলার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের পদের সংখ্যা ৭৫। এর মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১ জন, ট্রাফিক পরিদর্শক ৫ জন, সার্জেন্ট ৭ জন, ট্রাফিক উপপরিদর্শক ২ জন, সহকারী ট্রাফিক উপপরিদর্শক ৮ জন ও কনস্টেবল ৫২ জন। এর মধ্যে দাউদকান্দি, লাকসাম ও দেবীদ্বার উপজেলায় ৪ জন করে ১২ জন ট্রাফিকের দায়িত্বে আছেন। অপর ৬৩ জন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বে আছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস বলেন, কুমিল্লায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা একেবারেই কম। তার ওপর সড়ক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, ফুটপাত দখল, অনিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যাও এখানে বেশি। ফলে যানজট নিরসন করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বরুড়া বাজার, তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি বাজার, লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ বাজার, মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার, লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার ও দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে তীব্র যানজট হয়।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ‘কুমিল্লায় মঞ্জুর করা জনবল খুবই কম। আমি যোগদানের পর কিছু লোক বাড়িয়েছি। সার্জেন্ট সাতজন দিয়ে পুরো জেলা কাভার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমার মতে, কুমিল্লা ট্রাফিকের জন্য ২০০ থেকে ২৫০ জন দরকার। সেই লক্ষ্যে প্রস্তাব পাঠাব। এ নিয়ে বুধবার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে সভাও করেছি। কিছু জায়গায় যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগ শৃঙ্খলা এনেছে।’