বগুড়ায় লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাইলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা

বগুড়া জেলার মানচিত্র

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী শরিফুল ইসলামের (জিন্নাহ) পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

শুক্রবার রাত আটটার দিকে আমিনুল ইসলাম নামে ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের বন্দরবাজার এলাকায় লাঙ্গল মার্কার নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও নির্বাচনী প্রচারণায় জাপার প্রার্থী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লাঙ্গলে ভোট চেয়ে বক্তব্যও দেন।

আমিনুল ইসলাম শিবগঞ্জ সদরের চৌধুরী আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এবং একই উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের পাতাহার গ্রামের ভোটার।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা জাপার সভাপতি শরিফুল ইসলাম। আসন ভাগাভাগির সমঝোতার ভিত্তিতে এখানে আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। শুক্রবার শিবগঞ্জ বন্দর বাজারে লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থনে প্রচারণামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাপার প্রার্থী শরিফুল ইসলাম ছাড়াও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদের পাশে শিবগঞ্জ চৌধুরী আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আমিনুল ইসলামকেও দেখা যায়। এ সময় আমিনুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ভিডিওতে আমিনুল ইসলামকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাইতে শোনা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য আমিনুল ইসলামকে নির্বাচন কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। ২২ ডিসেম্বর তিনি নির্বাচন কমিশন আয়োজিত নির্বাচনী প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। এখন শুধু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রদানের চিঠি প্রদানের অপেক্ষা।

ভোট গ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ কোনো ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা কোনো প্রার্থীর প্রভাবে প্রভাবিত হতে না পারে অথবা পক্ষপাতমূলক আচরণের সুযোগ না পায় অথবা কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি না হয়, সেসব বিষয় বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করার পরও কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁর নিয়োগ বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা অথবা শিক্ষক/শিক্ষিকা বিতর্কিত অথবা যাঁদের সম্পর্কে সংশয়/মতবিরোধ রয়েছে, সেসব কর্মকর্তা অথবা শিক্ষক/শিক্ষিকাকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যকে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।

লাঙ্গল প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার শিবগঞ্জ বাজারে লাঙ্গল প্রতীকের অফিস উদ্বোধনকালে সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার আত্মীয় এবং এলাকার বড় ভাই। নির্বাচনী অফিস উদ্বোধনের আগে ওনার (সংসদ সদস্য) সঙ্গে হঠাৎ করেই দেখা হয়। তিনি অফিস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর পাশে বসতে বলেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে কোনো প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় উপস্থিত থাকা যাবে না, সেটা ওই সময় মাথায় আসেনি।’

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে ভোট গ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হবে।