মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে মাথার ওপরে স্থান দেওয়ার আহ্বান

সনদপত্র হাতে কৃতী শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে মাথার ওপরে স্থান দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা। আজ শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা এ আহ্বান জানান। অতিথিরা বলেন, মনে রাখতে হবে ভাষাশহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের। কৃতী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে মাতৃভাষা, মাতৃভূমি, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ অনুষ্ঠান হয়। সকাল আটটা থেকে আসতে শুরু করে কৃতী শিক্ষার্থীরা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও জেলার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও আসে। অনেক শিক্ষার্থী সঙ্গে নিয়ে আসে তাদের মা-বাবাকে। ৯ শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নেয় অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠান সফল করতে অংশ নেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জিয়াউল হক, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও চিকিৎসক আবদুস সালাম, হরিমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোর্শেদ, নারীদের সংগঠন ‘জাগো নারী বহ্নিশিখা’র সভাপতি ফারুকা বেগম, নিরাপদ সড়ক চাই-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল আলম প্রমুখ।

জিয়াউল হক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তদানের ঋণ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তোমাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি।’

নারী নেত্রী ফারুকা বেগম বলেন, ‘একটি দেশে নারীদের অবস্থান ও তাদের নিরাপত্তার অবস্থা কেমন, তা দিয়ে বিবেচনা করা যায় দেশটি কতখানি সভ্য। তোমরা পড়ার বাইরে ভালো কাজের সঙ্গে থেকো, তবেই ভালো মানুষ হতে পারবে।’

গোলাম মোর্শেদ বলেন, মাধ্যমিকের এ ফলাফল ধরে রাখতে হবে উচ্চমাধ্যমিকেও। ভালো কিছু করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে।

পর্যায়ক্রমে সারা দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হচ্ছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের এম এম হক বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সিনথিয়া হক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলে, ‘রাজশাহীর একটি কলেজে ভর্তি হয়েছি। সেখান থেকে এসেছি। অনেক আগ্রহ নিয়ে দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে দিনটি।’

বিলুপ্ত হতে যাওয়া সাইবেরিয়ার এক প্রজাতির পাখির প্রসঙ্গ টেনে রাজশাহীতে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘সেই পাখিদের মস্তিষ্কে পথরেখা আঁকা রয়েছে। তারা হাজার হাজার মাইল পথ পারি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যায় ঠিকই। ঠিক তেমনি তোমরাও পথ হারাবে না। তোমাদের হাত ধরে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’

সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে বন্ধুসভার সদস্য, বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী ও কৃতী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নাচ, গান ও কৃতি শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ।

অদম্য মেধাবী শহীদুল ইসলাম বলে, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে কৃষিশ্রমিক ও রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। এর আগে আমাদের আশপাশে আরও আমার মতো অদম্য মেধাবীদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাদের কথা প্রকাশ করেই শুধু নয়, তাদের পাশেও দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো। ওই অদম্য মেধাবীরা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার কথাও লেখা হয়েছে। আমার পাশেও দাঁড়াবে প্রথম আলো। আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারব বলে বিশ্বাস করি। প্রথম আলো আমাদের আপনজনের মতো।’