ইচ্ছেমতো বেতন বাড়াচ্ছে রাজশাহীর এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

প্রতীকী ছবি

সরকারি নীতিমালা না মেনে রাজশাহীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি (শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন) এবং ভর্তি ফি বাড়ানো হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ ভাগের বেশি টিউশন ফি বাড়ানো যাবে না। তা–ও অভিভাবকদের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) অনুমোদন সাপেক্ষে করতে হবে। অথচ রাজশাহীতে এমনও বিদ্যালয় আছে, যারা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে শতভাগ টিউশন ফি বাড়িয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের নতুন বেতন স্কেল প্রবর্তিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিওবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-কারিগরি) বেতন ও টিউশন ফি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

এমপিও হলো মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা–কর্মচারীরা প্রতি মাসে সরকার থেকে মূল বেতন এবং কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি ও বাৎসরিক ভর্তি ফি বাড়াতে হলে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় আর্থিক চাহিদা নিরূপণ করে বৃদ্ধির হার নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেতন বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ৩০ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না।

নীতিমালা অনুযায়ী, শুধু ঘাটতিতে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও ভর্তি ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায় করতে পারবে। এ বিষয়ে প্রস্তাব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশসহ অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দাখিল করবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে তা যথাযথ প্রতীয়মান হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) কাছে উপস্থাপন করবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) অনুমোদন করলে বিদ্যালয় ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

এমপিও হলো মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা–কর্মচারীরা প্রতি মাসে সরকার থেকে মূল বেতন এবং কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় স্কুল–কলেজ পর্যায়ে ৫৭৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত ৪৮৯টি। রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, তাঁর জানামতে গত পাঁচ বছরে শুধু দুটি বিদ্যালয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে তাদের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়নি। কারণ, তাদের তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ থাকার পরও তারা ঘাটতি মেটানোর কথা বলে শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। আর কেউ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আসেনি। এর মধ্যে আর কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের না জানিয়ে বেতন বাড়িয়েছে কি না, জানা নেই বলে জানান নাসির উদ্দিন।

শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা জানান, রাজশাহীর বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা প্রণয়নের পর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা মোটেও অনুসরণ করা হয়নি।

রাজশাহী নগরের একটি বড় প্রতিষ্ঠান শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি এবার শতভাগ টিউশন ফি বাড়িয়েছে। এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন ছিল ৫০০ টাকা। এবার তা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। নীতিমালায় আছে, মহানগর এলাকায় সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকল্যে তিন হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। অথচ ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ গোলাম মাওলা দাবি করেন, তাঁরা ১৩ বছর পর বেতন বাড়িয়েছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েই টিউশন ফি বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে। বেতন বৃদ্ধির সরকারি পরিপত্রের বিষয়ে গোলাম বলেন, এমন পরিপত্রের বিষয়টি এই প্রথম তিনি জানলেন।

শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা জানান, রাজশাহীর বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা প্রণয়নের পর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা মোটেও অনুসরণ করা হয়নি।

নীতিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে রাজশাহী নগরের স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল, বি বি হিন্দু অ্যাকাডেমিসহ আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নগরের লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েও টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আইরিন জাফর বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন বাড়িয়েছেন তাঁরা। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ–সংক্রান্ত কোনো পরিপত্র পাননি বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।

রাজশাহীতে একটি সরকারি অফিসে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন এক অভিভাবক। তাঁর মেয়ে শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ওই স্কুলে পঞ্চম শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে। পঞ্চম শ্রেণিতে বেতন ছিল মাসে ৩০০ টাকা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে মাসিক বেতন হয়েছে এক হাজার টাকা। আবার ভর্তি হতে লেগেছে ৫ হাজার টাকা। আগের বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে বেতন ছিল ৫০০ টাকা। এক বছরেই বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত স্কুলে এত বেশি টাকা বেতন নির্ধারণ করা অযৌক্তিক। অভিভাবকদের প্রতি জুলুম।’

নীতিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে রাজশাহী নগরের স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল, বি বি হিন্দু অ্যাকাডেমিসহ আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নগরের লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েও টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে।