পাবনায় বিস্ফোরণের ৭ মামলায় আসামি বিএনপির ৫৪ নেতা-কর্মী

পাবনার সাত উপজেলায় ১৮টি ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে হওয়া ৭ মামলায় বিএনপির ৫৪ জন নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার ভাঙ্গুড়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, আটঘরিয়া, সুজানগর, সাঁথিয়া ও আতাইকুলা থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়।

সাতটি মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪৮৫ জনকে। মামলার মধ্যে চারটি পুলিশ ও তিনটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বাদী হয়ে দায়ের করেছেন। সাতটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে ২১ নভেম্বর পাবনা শহরের খেয়াঘাট এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, নাশকতা সৃষ্টি ও জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ককটেলগুলো বিস্ফোরণ করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে ২০টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে মামলাগুলো করা হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে ভাঙ্গুড়া পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ফুটবল খেলা দেখছিলেন। তখন সেখানে পরপর চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জব্বার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্য সাইদুল ইসলামসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়।

একই রাতে ঈশ্বরদীর আলহাজ টেক্সটাইল মিলস হাইস্কুলে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরও ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শীতল কুমার বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজমল হোসেনসহ নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ১৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এদিকে চাটমোহর উপজেলা সদরে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপি নেতা–কর্মীদের নিয়ে নাশকতা তৈরির জন্য বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে গেলে তাঁরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অবিস্ফোরিত চারটি ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপি নেতা হাসাদুল ইসলামসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে।

আটঘরিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সদরের কড়ইতলা মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে খেলা দেখছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তখন কার্যালয়ের পাশে হঠাৎ একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বিএনপির ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০–৫০ জনকে আসামি করা হয়।

সুজানগর থানা–পুলিশ জানায়, নতুন কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর জেরে পৌর এলাকার ভবানীপুর মোড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির নেতা–কর্মীরা গোপন বৈঠক করছিলেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শেখ আব্দুর রউফসহ আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০–৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। অন্যদিকে আতাইকুলা থানা এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির ছয় নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭০–৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

সাঁথিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বৈঠক করার সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মনছুর আলী বাদী হয়ে বিএনপির ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬০–৭০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, এসব ঘটনা আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাজানো নাটক। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানি করার ষড়যন্ত্র চলছে। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যাতে নেতা–কর্মীরা অংশ নিতে না পারেন, সে জন্যই নাশকতার নাটক করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও বিএনপির সমাবেশ সফল হবে। গায়েবি মামলা দিয়ে নেতা–কর্মীদের দমানো যাবে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, নিজেদের বাঁচাতে বিএনপি আবোল–তাবোল করছে। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছে। জালাও–পোড়াও নীতিতে আবার দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। এটা মেনে নেওয়ার মতো না।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনা যা ঘটছে, তার আলোকেই পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, মামলা নিচ্ছে। এটা নিয়ে কে কী বলছে, তা দেখার বিষয় না। জনগণের জানমাল রক্ষা ও তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। সব ধরনের নাশকতা বন্ধে পুলিশ তৎপর আছে।’