চরের কাশবন ঘিরে যমুনার পার এখন পর্যটনকেন্দ্র

পাবনার বেড়ায় কাশবনের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। উপজেলার দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

প্রতিদিন বিকেল নামলেই পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনার পাড়ে ভিড় জমে প্রকৃতিপ্রেমীদের। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুর সঙ্গে, আবার কেউ দল বেঁধে নৌকায় চড়ে নদী পার হন। গন্তব্য বেড়ার দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা, চরনাগদা, চরনাকালিয়া, চরসাঁড়াশিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি চর।

এসব চর এখন শরতের কাশফুলে সেজেছে। বাতাসে দুলে ওঠা কাশফুল দেখে মনে হয়, এ যেন সাদা মেঘের রাজ্য।

আরও পড়ুন

শুধু বেড়া নয়, সাঁথিয়া, শাহজাদপুরসহ আশপাশের উপজেলার মানুষও আসছেন এই সৌন্দর্য দেখতে। যমুনার এপাড় থেকে নৌকায় ভেসে পার হওয়ার পর চোখে পড়ে কাশফুলে ভরা চর। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন, কেউ কাশফুল হাতে পোজ দিচ্ছেন। শিশুরা ছুটে বেড়াচ্ছে কাশবনের ভেতর। এসব চরে নদীর থেকে ভেসে আসা খোলা হাওয়া। আর শরতের শুভ্রতা বিলানো কাশফুলের মায়ায় অন্য রকম আনন্দ খুঁজে পান সবাই।

বাচ্চারা কাশবনে ছোটাছুটি করে ছবি তুলছে, আনন্দ করছে, দেখে মন আরও ভরে যাচ্ছে।
আবুল কালাম আজাদ, কলেজশিক্ষক

সরেজমিন দেখা যায়, চরের যে অংশে কাশবন সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে কোনো জনবসতি নেই। পুরোনো চরগুলোর জনবসতিহীন অংশে আর নতুন চরের প্রায় পুরো অংশেই সৃষ্টি হয়েছে কাশবন। তবে যমুনার অন্য চরগুলোর পাড় ঘেঁষেও এমন সৌন্দর্যের হাতছানি দেখা যাচ্ছে।

যমুনার পাড়ে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে শরতের কাশফুল। পাবনার বেড়া উপজেলার দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেড়া উপজেলার যমুনার এসব চরের বেশির ভাগ জায়গায় জনবসতি নেই। নতুন চরজুড়ে কাশফুল ফুটে তৈরি হয়েছে অনন্য এক দৃশ্যপট। তাই এখন বেড়ার এই চরগুলো হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রিয় ভ্রমণ–গন্তব্য। চরগুলোয় ভাদ্র মাসের শেষ দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। এ সময় চরগুলোর অনেকটা এলাকা কাশফুলে সাদা হয়ে যায়। সাধারণত কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে। আর এই সময়ের মধ্যে কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে বেড়া উপজেলাসহ পাশের অন্য উপজেলাসহ পাবনা জেলা শহর থেকেও প্রকৃতিপ্রেমীরা এসব স্থানে ভিড় জমান।

আগেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম, ছুটিতে বাড়ি গিয়ে কাশবন দেখতে যাব। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কাশবনে এসে আমি অভিভূত।
কানজান রাইয়ান রিদি, শিক্ষার্থী, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

সম্প্রতি এক বিকেলে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা চরে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত কাশফুল। ওপরে নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘের ভেলা, নিচে নদীর হাওয়া দুলিয়ে দিচ্ছে কাশফুল—এমন দৃশ্য যে কারও মন কেড়ে নেবে।

পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের নিয়ে কাশবনে বেড়াতে এসেছিলেন কলেজশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। মুগ্ধতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা কাশবনে ছোটাছুটি করে ছবি তুলছে, আনন্দ করছে, দেখে মন আরও ভরে যাচ্ছে।’

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও বেড়া পৌর এলাকার বাসিন্দা কানজান রাইয়ান রিদি বলেন, ‘কাশফুলের কারণে চরের সৌন্দর্য অনেক গুণ বেড়ে যায়। আগেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম, ছুটিতে বাড়ি গিয়ে কাশবন দেখতে যাব। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কাশবনে এসে আমি অভিভূত।’

আরও পড়ুন

যমুনাপাড়ের পেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেল্টু মিয়া বলেন, যমুনার পেঁচাকোলা ঘাট থেকে কাশফুলে ভরা চরে যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। প্রতিজনের যাওয়া-আসার ভাড়া মাত্র ২০ টাকা। এবার অসংখ্য মানুষ কাশবন দেখতে এই ঘাটে ভিড় জমাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে ঘাটটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।