ঘন কুয়াশায় চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয়, দুর্ভোগ

কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিটি ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। আজ রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে
ছবি: প্রথম আলো

যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মাহমুদ আল আরাফাতের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ায়। প্রায়ই চুয়াডাঙ্গা থেকে সকালে যশোরে গিয়ে তিনি ক্লাস করেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা–বেনাপোল পথে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে তিনি যশোরে যান। ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে ছাড়ে। সাধারণত ট্রেনটি সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটের মধ্যেই যশোরে পৌঁছে যায়।

তবে এক সপ্তাহ ধরে কুয়াশার কারণে ট্রেনটি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। এতে মাহমুদের মতো ওই ট্রেনের নিয়মিত অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকেই ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিট দেরিতে সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে ছেড়ে যায়। অথচ এর এক ঘণ্টা আগেই ট্রেনটির যশোরে পৌঁছানোর কথা ছিল। মাহমুদ বলেন, ‘ট্রেনের বিলম্বের কারণে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারলাম না। ক্লাস মিস হয়ে গেল। এতে সমস্যায় পড়তে হবে।’

রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থী ছাড়াও যশোরগামী চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা নিয়মিত সকালে এই ট্রেনে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া বেনাপোল হয়ে ভারতে যেতে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার যাত্রীরাও এই ট্রেনে ভ্রমণ করেন। তবে ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনটি সময়মতো চলাচল না করায় নিয়মিত যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। শুধু বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনই নয়, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলাচলকারী উভয় পথের (আপ-ডাউন) প্রায় সব ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত চলাচলকারী ট্রেনগুলো সর্বনিম্ন ১৮ মিনিট থেকে শুরু করে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। গতকাল খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোর মধ্যে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ ১৮ মিনিট, চিলাহাটিগামী রূপসা এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা, ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট, রাজশাহীগামী সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ৩৮ মিনিট, সৈয়দপুরগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট, যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২৮ মিনিট বিলম্বে এবং রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ ৫১ মিনিট, চিলাহাটিগামী রূপসা এক্সপ্রেস ২ ঘণ্টা ও রকেট এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা বিলম্বে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে গন্তব্যে ছেড়ে যায়।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সময়মতো চলাচল না করায় নিয়মিত যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে
ছবি: প্রথম আলো

অপর দিকে গতকাল ঢাকা থেকে যশোরের বেনাপোলগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ও খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি ৩১ মিনিট, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, কপোতাক্ষ ২৯ মিনিট এবং আজ সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট, ঢাকা থেকে খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট বিলম্বে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন ত্যাগ করে।

খুলনা থেকে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রেলপথে অসংখ্য অবৈধ রেলগেট আছে। এসব রেলগেট দিয়ে মানুষ ইচ্ছেমতো চলাচল করে। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা অনেকটাই কমে এসেছে। দূর থেকে সংকেতও পুরোপুরি দেখা যায় না। এ কারণে সতর্কতার সঙ্গে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার এ কে এম ইউসুফ পলাশ প্রথম আলোকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বেশির ভাগ ট্রেনই বিলম্বে চলাচল করছে। অনিচ্ছাকৃত এই শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদেরও বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিষয় মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, এক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশা পড়ছে। পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশা স্থায়ী হচ্ছে। আরও কয়েক দিন এমন বৈরী আবহাওয়া থাকবে। এ ছাড়া আগামীকাল সোমবার থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে বলে জানান তিনি।