কুমিল্লায় ‘জনবিচ্ছিন্নতার কারণে’ হেরেছেন বর্তমান দুই চেয়ারম্যান

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী (বাঁ থেকে) গোলাম সারওয়ার ও আবদুল হাই এবং বরুড়া উপজেলা পরিষদের প্রার্থী এ এন এম মইনুল ইসলাম ও হামিদ লতিফ ভূঁইয়া
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে হামিদ লতিফ ভূঁইয়া ওরফে কামাল ও সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পদে আবদুল হাই ওরফে বাবলু বিজয়ী হয়েছেন। প্রথমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাঁরা জয়ী হয়েছেন। দুজনই চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ।

দ্বিতীয় ধাপে গতকাল মঙ্গলবার এই দুই উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জনবিচ্ছিন্নতার কারণে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ও বরুড়া উপজেলার পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এ এন এম মইনুল ইসলাম হেরে গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনবিচ্ছিন্নতা এবং দলীয় চেয়ারম্যানসহ কর্মীরা বিমুখ হওয়ায় টানা তিনবারের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার হেরে গেছেন। আর বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যদের প্রভাবের কারণে হেরে যান বরুড়া উপজেলার পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এ এন এম মইনুল ইসলাম।
বরুড়ায় প্রথমবার ভোট করেই সাফল্য পেয়েছেন হামিদ লতিফ ভূঁইয়া। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের শ্যালক। বরুড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতি মেয়াদেই (পাঁচ বছর পরপর) নতুন মুখ জয়ী হয়েছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত হাফিজ আহমেদ, ২০১৪ সালে বিএনপি–সমর্থিত আবদুল খালেক চৌধুরী, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ এন এম মইনুল ইসলাম নির্বাচিত হন।

এ এন এম মইনুল ইসলামকে হারিয়ে জয়ী হওয়া হামিদ লতিফ ভূঁইয়া বরুড়া উপজেলার মানুষের কাছে ‘অচেনা’ মুখ। আওয়ামী লীগে তাঁর কোনো পদ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাই হওয়ার কারণে হামিদ লতিফ ভূঁইয়ার পক্ষে অবস্থান নেন কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম ও একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যরাও। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও উপজেলার ১৩৬টি ভোটে কেন্দ্রের মধ্যে বেশির ভাগ কেন্দ্রে আনারসের পক্ষে অবস্থান নেন।

২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই এ এন এম মইনুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দূরত্ব বাড়ে। বরুড়া উপজেলার মানুষের সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল একেবারেই কম। মইনুলের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর, প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করে প্রশাসন। ওই কারণে তাঁকে হারানো হয়।

আরও পড়ুন

মইনুল বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বরুড়া থেকে নির্বাচিত চারবারের আওয়ামী লীগ–দলীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত আবদুল হাকিমের ছেলে। মইনুল ইসলাম দাবি করেন, পুলিশ ও প্রশাসনের হয়রানির কারণে নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি, দাঁড়াতে পারেননি। বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। একতরফা সিল মারা হয়েছে।

এদিকে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার হেরে গেছেন। প্রায় ১৫ বছর পর পরাজয়ের মুখ দেখল কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামালের পরিবার। আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি টানা চারবার এই আসনে সংসদ সদস্য হন। তাঁর ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারওয়ার সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

আ হ ম মুস্তফা কামালের বড় ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ কামরুল হাসান শাহীন লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় একক প্রার্থী না থাকা ও দলের সমর্থন বা দলীয় প্রতীক না থাকায় বেকায়দায় পড়েন গোলাম সারওয়ার।

সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবদুল হাই। তিনি এর আগে টানা তিনবার গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার আবদুল হাই চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে সরাসরি সমর্থন জানান কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন।

গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘শহরের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন ও তাঁর অনুসারীদের আমাদের উপজেলায় এসে প্রভাব বিস্তার, হুমকির কারণে আমার নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ করতে পারেননি। আমাদের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বানানো চেয়ারম্যানরাও আমার বিপক্ষে ভয়ে চলে যান। এসব কারণে আতঙ্কে ভোটাররা কেন্দ্র যাননি।’

সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাম সারওয়ার তিনজন প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান।