‘কম্বলডা পায়্যা পরাণডাত শান্তি লাগিচ্চে’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং এনআরবিসি ব্যাংকের সহায়তায় আজ বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ডাকাতেরচরের শনপচা ঘাটে শীতার্তদের কম্বল দেওয়া হয়। কম্বল পেয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন দুই নারী
ছবি: সোয়েল রানা

ধনী পরিবার দেখেই ৬৫ বছর আগে হাওয়া বিবিকে বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। স্বামী জাহান আলী শেখের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা চিলাপাড়া চরে। বিয়ের সময় পাকা ঘর, গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু—সব মিলিয়ে হাওয়া বিবির সংসারে সুখের হাওয়া। এরপর দফায় দফায় যমুনার ভাঙনে পরিবারটি নিঃস্ব হয়েছে। দুই যুগ আগে স্বামীকেও হারিয়েছেন। এখন আর কেউ নেই হাওয়া বিবির। থাকছেন শনপচা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘরে। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে পেট চালান। ঘরে একখানা কম্বল না থাকায় প্রচণ্ড শীতে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডাকাতমারা চরে গিয়ে হাওয়া বিবির খোঁজ পাওয়া যায়। শীতে গরম কাপড়ের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে থাকা ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার হাতে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা একটি কম্বল তুলে দেন।

কম্বলটি হাতে পেয়ে খুব খুশি হন হাওয়া বিবি। তিনি বলেন, ‘ইলিপ পাই না, কম্বল পাই না, ঘরত খ্যাতা কম্বল কিচ্চু নাই। ম্যালাদিন থ্যাকে ঠান্ডাত মরিচ্চি। ঠান্ডার কামড় সহ্য করবার পারিচ্চি না। কম্বলডা পায়্যা খুব উপকার হচে। আজ রাতত শান্তিতে ঘুমাবার পারমু।’

হাওয়া বিবির মতো কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের ডাকাতমারা, শনপচা, মুলবাড়ি, ইঁদুরমারা চরের ২০০ শীতার্ত মানুষের মধ্যে আজ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং এনআরবিসি ব্যাংকের সহায়তায় ডাকাতমারা চরের শনপচা ঘাটে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।

উত্তর শনপচা চরের খইমন বিবিও (৬০) যমুনার ভাঙনে কয়েক বছর আগে বসতঘর হারিয়ে ডাকাতমারা চরের গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই নেন। কম্বল নিতে এসে তিনি বলেন, ‘বন্যা আর লদী ভাঙ্গনত হামার সগলি শ্যাষ। ঘরত অ্যাকনা লেপ–কাঁথা নাই। কম্বলডা পায়্যা পরাণডাত শান্তি লাগিচ্চে।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং এনআরবিসি ব্যাংকের সহায়তায় বগুড়া বন্ধুসভার বন্ধুরা আজ মঙ্গলবার ২০০ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করে। আজ দুপুরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার শনপচা ঘাটে
ছবি: সোয়েল রানা

ডাকাতমারা চরের গুচ্ছগামের রওশন আরা বিবি বলেন, ‘বর্ষাত যমুনা ফুঁসে ওঠে। বানের পানি কচলায়ে মারে। বান শেষ হলে মারে নদীভাঙ্গন। এখন আবার হাড়কাঁপানো ঠান্ডার কামড়। হামাকেরে দুঃখ শ্যাষ হবির লয়।’

ডাকাতমারা চরের মোমেনা বিবি বলেন, ‘এক দশক আগে স্বামী শহিদুল ইসলাম মারা গেছে। ঘরত পাঁচডা ছেলে–মেয়ে। কামাই–রোজগার করবার কেউ নাই। ছলপল লিয়ে ঠান্ডাত খুব কষ্ট করিচ্চি।’

কম্বল নিতে আজিজ শেখ বলেন, ‘মথুরাপাড়া চরত বাপ দাদার বসত আচলো। ৩০ বছর আগে যমুনার ভাঙনে চর ভাঙ্গে শ্যাষ। খালি হাতে  গুচ্ছগাঁওত আসে উঠচি। চরত কাম নাই, কামাই নাই। খুব কষ্ট করে দিন যাচ্চে।’

কম্বল পেয়ে খুশি ডাকাতমারা চরের বাক্‌প্রতিবন্ধী সজীব মিয়াও।

আজ কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ কুমার চক্রবর্তী, কর্ণিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, প্রথম আলোর বগুড়া বন্ধুসভার সভাপতি ও বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন, বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার রায়, বন্ধুসভার উপদেষ্টা অনিন্দিতা হক, প্রথম আলোর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার পারভেজ, কর্ণিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওসমান আলী আকন্দ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তমছের ব্যাপারী এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলম প্রমুখ।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।