নোয়াখালীতে বেগমগঞ্জ উপজেলার ছাত্রদলের সাবেক নেতা মীর হোসেন হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। নিহত মীর হোসেনের স্বজন ও এলাকার বাসিন্দারা এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। এতে মীর হোসেনের মা, স্ত্রী, ভাই ও স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি দেন আয়োজকেরা। এতে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান–সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন।
মানববন্ধনে ৯ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে বিচার চান নিহত মীর হোসেনের স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার (১৯)। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল? তাঁকে কেন এভাবে খুন করা হলো? আমার ৯ মাসের সন্তানকে এতিম করা হলো? এই এতিম সন্তান নিয়ে কার কাছে যামু? কে আমার এতিম সন্তানকে দেখবে? আমি আমার স্বামীর খুনিদের, এতিম সন্তানের বাবার খুনিদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই।’
ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা মমতাজ বেগম। মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘আঁর (আমার) হুতেরে (ছেলে) মারি হালাইছে আই (আজ) হরায় ছয় মাস। পুলিশ খুনিদের কয়েকজনকে ধইরলেও হিগুন (তাদের) আবার কোটেত্তুন (আদালত থেকে) জামিন লই (নিয়ে) বাইর অই (হয়ে) গেছে। অন (এখন) আঙ্গোরে (আমাদের) মামলা তুলি লইবারলাই হুমকি–ধমকি দিতেছে। আঁই খুনির গো ফাঁসি চাই।’
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন নিহত মীর হোসেনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে সোহেল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক মুরাদ জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মীর হোসেন উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। গত ২৪ এপ্রিল দুপুরে মীর হোসেন গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হন। রাত ৯টার দিকে তিনি স্ত্রীকে মুঠোফোনে জানান, পরিচিত এক ব্যক্তির জানাজায় যাচ্ছেন, সেখান থেকে ফিরতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। এরপর মীর হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে মীর হোসেনের সন্ধান না পেয়ে তাঁর স্ত্রী বেগমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
২৫ এপ্রিল বিকেলে ছয়ানী এলাকার একটি সড়কের ওপর নিখোঁজ মীর হোসেনের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরদিন ২৬ এপ্রিল সকালে স্থানীয় একটি ধানের স্তূপে রক্ত দেখে লোকজনের সন্দেহ হয়। এর সূত্র ধরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন অদূরে থাকা পরিত্যক্ত একটি সেপটিক ট্যাংকে পলিথিন মোড়ানো বস্তু দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ পলিথিন খুলে মীর হোসেনের লাশ উদ্ধার করে।
জানতে চাইলে বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা মীর হোসেন খুনের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এখনো মামলার তদন্ত চলছে। পরিবারকে কেউ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’