‘আমার আর কেউ থাকল না, আমি কাদের নিয়ে বাঁচব’
এক মাস আগে ব্রেন স্ট্রোক হয় মিজানুর রহমানের। এর পর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ও শ্যালক অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজনই নিহত হন।
আজ শনিবার সকালে সাড়ে সাতটার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা তাঁরা তিনজন নিহত হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন নীলা খাতুন (২৭), তাঁর ভাই নিশান গাজী (২৫) ও নীলা খাতুনের স্বামী মিজানুর রহমান (৩৫)। নীলা খাতুন ও নিশান গাজী যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের রহমত উল্লাহ গাজীর মেয়ে ও ছেলে। মিজানুর রহমান যশোরের কেশবপুর উপজেলার চালিতাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। নিশান রাজগঞ্জ এডাস মডেল স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও তাঁর বোন নীলা খাতুন গৃহিণী ছিলেন। মিজানুর রহমান ফরিদপুরে বেসরকারি সংস্থা রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশনের (আরআরএফ) শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। নীলা-মিজানুর দম্পতির ছয় ও চার বছর বয়সের দুই ছেলে রয়েছে।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনজনের লাশ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় বাড়িতে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছেলে-মেয়ে ও জামাতার লাশ দেখে মা নিলুফা বেগম (৪৬) কান্নায় ভেঙে পড়েন। বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পাশেই অঝোরে কাঁদছিলেন বাবা রহমত উল্লাহ গাজী (৫২)। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার আর কেউ থাকল না, আমি কাদের নিয়ে বাঁচব!’
নীলা খাতুন ও নিশান গাজীর খালাতো ভাই আকাশ চাকলাদার বলেন, ‘খালু রহমত উল্লাহ গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, বড় করেছেন। নিশান গাজী একটি স্কুলে চাকরি করতেন। মোটামুটি চলছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু আজ সব শেষ হয়ে গেল।’
আজ শনিবার সন্ধ্যায় মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তিনজনের জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর নিশান গাজীকে উপজেলার হানুয়ার গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে এবং মিজানুর রহমান ও নীলা খাতুনকে কেশবপুর উপজেলার চালিতাবাড়িয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।