রাজশাহীতে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর, প্রতিমা বিসর্জন শুরু

দুর্গাপূজা শেষে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার বিকেলে রাজশাহী নগরের ফুদকিপাড়া পদ্মা নদী এলাকায়
ছবি : শফিকুল ইসলাম

দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জনও শুরু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পদ্মা নদীতে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। তবে বেশির ভাগ প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় বিকেলের পর থেকে।

আজ বিজয়া দশমীর সকালে রাজশাহীর পূজামণ্ডপগুলোতে শুরু হয় অঞ্জলি দেওয়া। ভক্তরা দলে দলে এসে অঞ্জলি দেন। সকাল থেকেই মা দুর্গার বিদায়ের সুর বেজে ওঠে। তবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিঁদুর উৎসব। বাজে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি। দুর্গাকে মিষ্টিমুখ করানো ও পান-সুপারি খাওয়ানো হয়। এরপর দেবী দুর্গার পায়ের কাছে রাখা সিঁদুর দিয়ে শুরু হয় ‘সিঁদুর’ উৎসব। বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। ছোট ছেলেমেয়ে ও পুরুষেরা এতে অংশ নেন।

রাজশাহীতে ভক্তরা বলেন, দেবী দুর্গা অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে এ ধরায় এসেছিলেন। পাঁচ দিন থাকার পরে আজ চলে যাচ্ছেন। এটা তাঁদের জন্য দুঃখের একটি দিন। তবে তাঁরা মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়েছেন। দশমীর দিনে দুর্গাকে মিষ্টিমুখ করানো ও পান-সুপারি খাওয়ানো হয়। এরপর দেবী দুর্গার পায়ের কাছে রাখা সিঁদুর দিয়ে শুরু হয় ‘সিঁদুর’ উৎসব।

রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকার রীঁ বরদা কালীমাতা মন্দিরে সিঁদুর খেলায় অংশ নেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক অনামিকা সরকার, বাসন্তী রানী সরকার, কণিকা রানীসহ অনেকে। অনামিকা বলেন, এ উৎসব মূলত হিন্দু বিবাহিত নারীদের। স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনায় এ সিঁদুর খেলা খেলে থাকেন তাঁরা। এ ছাড়া নারীরা সংসারজীবনে সুখ–শান্তির জন্যও প্রার্থনা করেন। এক নারী অন্য নারীকে আশীর্বাদ করেন ও শুভেচ্ছা জানান।

নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় উৎসর্গ পূজামণ্ডপে সকালে অঞ্জলি দিতে এসেছিলেন বিনয়ী রানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব পরিবার-পরিজন একত্র হয়েছিলেন। মা দুর্গা মর্ত্যে এসেছিলেন অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে। আজ তাঁর যাওয়ার দিন। মায়ের কাছে তাঁরা আশীর্বাদ চেয়েছেন ও সামনের বছর আবার আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

নগরের কুমারপাড়া রীঁ বরদা কালীমাতা মন্দিরের পুরোহিত অমৃত সান্যাল বলেন, ষষ্ঠীর দিনে বোধনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গা মর্ত্যলোকে আগমন করেন। সেদিন থেকে মা পাঁচ দিন, মানে বিজয়া দশমী পর্যন্ত অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি ধরাধামে সব অশুভ শক্তি ধ্বংস করেন। তিনি আরও বলেন, এ বছর তাঁরা মায়ের কাছে পৃথিবীর শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে যাতে একসঙ্গে সব বিভেদ ভুলে বসবাস করতে পারেন, সে প্রার্থনা করেছেন।

প্রতিমা বিসর্জনের আগে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন নারীরা। আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় রীঁ বরদা কালী মাতা মন্দিরে
ছবি : প্রথম আলো

এদিকে দুপুর থেকেই সিঁদুর খেলা শেষে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়েছে রাজশাহী নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে। বেলা তিনটার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে, ট্রাকে করে দেবী মা দুর্গার প্রতিমা এনে পদ্মার পাড়ে রাখা হচ্ছে। কয়েকটি মন্দিরের প্রতিমা একত্র হলেই নৌকায় করে নিয়ে গিয়ে পদ্মা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। দেবী দুর্গা নৌকায় তোলার আগে ভক্তরা উলুধ্বনি দিয়ে শেষবারের মতো বিদায় জানাচ্ছেন। ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলে নারীরা উলুধ্বনি দেন।

দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে নদীধারে এসেছেন লক্ষ্মী রানী সরকার। তিনি বলেন, দুর্গা মা এই কয়েক দিন তাঁদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন। আজ তাঁর চলে যাওয়ার সময়। তাই মাকে এগিয়ে দিতে এসেছেন। সামনে বছর আবার মা আসবেন। সেই অপেক্ষায় থাকবেন।

ফুদকিপাড়া এলাকায় প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পদ্মার পাড়ে শৃঙ্খলা আনার জন্য বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। নৌ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকায়।
নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে। পুরো এলাকায় তাঁরা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। দেবী দুর্গার বিসর্জনের সময় যাতে নৌকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য নৌকায় লোকজন সীমিত রাখা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবার সর্বমোট ৪৫০টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রাজশাহী নগরে রয়েছে ৭৬টি। এবার রাজশাহীতে আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।