নরসিংদীতে হত্যা মামলায় সাবেক পৌর মেয়রের ফাঁসির দাবিতে ঝাড়ুমিছিল
নরসিংদী পৌরসভার সাবেক কমিশনার (কাউন্সিলর) মানিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের ফাঁসির দাবিতে ঝাড়ুমিছিল করেছেন বাদীপক্ষের লোকজন। মিছিলটি আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দিলে জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের সামনে কামরুজ্জামানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা। এ সময় সড়কটিতে চলাচলরত কয়েক শ যানবাহন প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে থাকলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কামরুজ্জামান আদালতে হাজিরা দিতে আসবেন, এমন খবরে নিহত মানিক কমিশনারের স্বজন, পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ লোক ঝাড়ু নিয়ে মিছিল করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি শহরের ভেলানগর এলাকায় প্রকাশ্যে খুন হন নরসিংদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কমিশনার মানিক মিয়া। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই আমির ইসলাম বাদী হয়ে নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান, তাঁর বড় ভাই সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার স্বামী সুমনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ১০ জুলাই মামলাটি স্থানান্তরিত হয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। পরবর্তী সময়ে ওই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০১১ সালে মামলার ৩ নম্বর আসামি সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন নিহত হন। ওই আদালতে পর্যাপ্ত সাক্ষী ও আসামিরা হাজির না হওয়ায় মামলাটি নরসিংদী আদালতে আবার স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ, বাদীপক্ষের একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মামলার প্রধান আসামি কামরুজ্জামান আজ যেকোনো সময় আদালতে হাজিরা দিতে আসবেন, এমন খবরে সকাল থেকেই বাদীপক্ষের লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের কয়েক শ নেতা-কর্মী উপজেলা কমপ্লেক্সে জড়ো হন। এই পরিস্থিতিতে আদালতে আজ আর আসছেন না দেখে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণের দিকে রওনা হন। পরে জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের সামনে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশি বাধায় আদালত প্রাঙ্গণে যেতে ব্যর্থ হয়ে সেখানেই তাঁরা কামরুজ্জামানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, আমিরুল হক ভূঁইয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান, সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রিপন সরকার, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মিয়া মো. মঞ্জুর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জোবায়ের আহমেদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন প্রমুখ।
এর আগে গত বছরের ১৬ আগস্ট কামরুজ্জামান ওই মামলায় নরসিংদীর আদালতে প্রথম হাজিরা দিতে এসেছিলেন। সেদিন আদালত প্রাঙ্গণে তিনি প্রবেশের পরই বাদীপক্ষের সঙ্গে আসামিপক্ষের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। হাজিরা দেওয়া শেষে আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সময় কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন বাদীপক্ষের লোকজন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গাড়িতে উঠে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় কামরুজ্জামানের গাড়িতে জুতা ও বোতল ছুড়ে মারা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ২০ মার্চ নরসিংদী আদালতে ওই মামলার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল। সেদিনও নিহত মানিক কমিশনারের স্বজন, পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ লোক ঝাড়ু হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। পুলিশি প্রহরায় কামরুজ্জামান সেদিন আদালতে হাজির হন।
জানতে চাইলে মামলার বাদী আমির ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা এবং প্রধান আসামি কামরুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানিক কমিশনারের সমর্থকেরা ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। আসামিপক্ষের লোকজন আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মামলায় প্রধান আসামি, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘মিছিলটি আদালত প্রাঙ্গণের দিকে যাওয়ার সময় থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আমাদের অনুরোধে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’