রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদকে অব্যাহতি

নাহিদ হাসান খন্দকারছবি: সংগৃহীত

রংপুরে চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংগঠনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ও সদস্যসচিব রহমত আলী স্বাক্ষরিত
অব্যাহতি আদেশে বলা হয়েছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র পদ থেকে নাহিদ হাসান খন্দকারকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে ইমতিয়াজ আহম্মদ বলেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মতামতে ও কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাহিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ইমতিয়াজ বলেন, ‘এটা কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা অনেক রকম বিষয় পাচ্ছি। কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত দিলে আপনারা সবাই জানতে পারবেন।’

অব্যাহতির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নাহিদ হাসান কোনো মন্তব্য করেননি।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে শোনা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের সঙ্গে এক ব্যক্তির টাকা নিয়ে দর–কষাকষি হচ্ছে। নাহিদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে সংগঠন থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তবে এসব অভিযোগ শুরু করে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন নাহিদ হাসান।

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভিডিওর ওই কথোপকথনের ঘটনা ২৪ ফেব্রুয়ারির। রংপুর নগরের হাজিরহাট এলাকায় একটি ইকোপার্কের নামে অবৈধভাবে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

ভিডিওর কথোপকথনে নাহিদ আরেক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ব্যবসা আপনি বন্ধ করবেন কেন, ব্যবসা আপনি চালান। ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনে সময় নেন। আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে, ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে। যদি মনে হয় কিছু কমাবেন, তাহলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমি চাই না আপনাদের কোনো সমস্যা হোক। জানেন তো সংগঠন চালাতে হলে কী কী করতে হয়।’

আরও পড়ুন

২ মার্চ রংপুরে সংবাদ সম্মেলনে আজহারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, ইকোপার্ক নির্মাণ ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে যে জমিটির বিষয়ে আলোচনা উঠেছে, সে জমির মূল মালিক তিনি। তাঁর ভাই কানাডাপ্রবাসী আতিকুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম জাল রিটের মাধ্যমে জায়গাটি দখল করেছেন। আদালতে মামলা চললেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাইয়েরা ওই জমি থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তাঁর জমি দখল হওয়ায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা অপ্রচার; বরং ওই নেতারা অর্থের প্রলোভন অগ্রাহ্য করে সেখান থেকে চলে আসেন।

এর পরের দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের চাঁদা দাবি ও সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন সেই ইকোপার্কের মালিক আতিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর শাখার মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের নেতৃত্বে ইকোপার্ক থেকে ১ লাখ টাকা এবং প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।