৮ বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম

তিনতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালু না হওয়ায় হাওরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।

সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকায় হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় ভবনছবি: প্রথম আলো

হাওর–অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় আট বছর আগে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলায় এই প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শুরু থেকেই এটি নিয়ে একধরনের অবহেলা রয়েছে বলে মনে করেন হাওরবাসীর বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের পর এটি পড়ে ছিল চার বছর। এরপর উদ্বোধন হলেও এখন আট বছর চলে গেছে, কিন্তু কোনো কার্যক্রম নেই। এ কারণে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে হাওরবাসীর যে প্রত্যাশা ছিল, সেটি পূরণ হচ্ছে না। এ প্রতিষ্ঠান–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লোকবলের সংকটের কারণে আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, হাওর–অধ্যুষিত জেলাটিতে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এরপর সুনামগঞ্জ পাউবোর তত্ত্বাবধানে পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় পাউবোর জায়গায় একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তিনতলা এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। পাউবো ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। কিন্তু ভবনটি বুঝে নেয় চার বছর পর। এরপর ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরপর আরও আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এটির দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই।

সম্প্রতি ওই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সুরমা নদীর তীরে নির্মাণ করা তিনতলা ভবনের নিচতলার অর্ধেক ও দ্বিতীয় তলায় অফিস এবং তৃতীয় তলা রয়েছে গেস্টহাউস। প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম না থাকায় দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষ অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় হিসেবে। আরেকটি কক্ষ ব্যবহার করছে পাউবো। একটি কক্ষে বসছেন হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের এই কার্যালয়ের দুজন কর্মী। তাঁরা হলেন বদিউল আলম ও উমায়ের হোসেন। দুজনই অফিস সহায়ক। বদিউল এক বছর ও উমায়ের আছেন চার বছর ধরে। দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অফিস দেখাশোনা ছাড়া তাঁদের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।

পাউবো ও হাওর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, সুনামগঞ্জে হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া হাওর এলাকায় পাউবোর নদী খনন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ নানা কাজ করে। হাওর এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন শীর্ষক একটি বড় প্রকল্পের কাজ এ বছর থেকে শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার হাওর এলাকার উন্নয়ন, পর্যটনের বিকাশে নানাভাবে কাজ করছে। হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এসব কাজে সহযোগিতা, তদারকিসহ নানাভাবে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুয়েক বছর ধরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় প্রতিনিধিরা সরেজমিন একবার এসে দেখে যান বলে জানা যায়।

‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জকে আমরা হাওরের রাজধানী বলি। আমাদের দাবি ছিল, হাওর উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় এখানে হবে। সেটি না হয়ে আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কিন্তু এটিরও কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না।’

বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কৃষি, পানি ও পরিবেশ) নুরজাহান খানম সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন, তবে তিনি বসেন ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মূলত লোকবলের সংকটের কারণেই এই কার্যালয়ের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।