লিমনকে কারা গুলি করেছে জানাতে পারেনি পিবিআইও, মানতে নারাজ মা

লিমন হোসেন
ফাইল ছবি

ঝালকাঠিতে লিমন হোসেন হত্যাচেষ্টা মামলায় ছয় র‌্যাব সদস্যের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছেন তাঁর মা হেনোয়রা বেগম। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দাখিল করা হয়েছে।

আদালতের বিচারক এ এইচ এম ইমরুনুর রহমান শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন বলে জানিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র নিয়োজিত লিমনের মায়ের আইনজীবী আক্কাস সিকদার।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বরিশাল র‌্যাব-৮–এর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় তৎকালীন কলেজছাত্র লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে লিমনের বাঁ পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকেরা। এ ঘটনায় লিমনের মা বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন বরিশাল র‌্যাব-৮–এর ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয় র‌্যাব সদস্যের নামে ঝালকাঠির আদালতে একটি হত্যাচেস্টা মামলা করেন। মামলাটি রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম তালুকদার তদন্ত করেন। তিনি ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে র‌্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন।

আরও পড়ুন

লিমনের মা হেনোয়রা বেগম ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দাখিল করেন। আদালত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। নারাজি খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ রিভিশন করেন হেনোয়রা বেগম। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান রিভিশন মঞ্জুর করেন। রিভিশন মঞ্জুর হওয়ার পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজা  মামলাটি তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে আবারও থানা–পুলিশের প্রতিবেদন সত্য বলে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সত্য। তবে কারা তাঁকে গুলি করেছে, তার কোনো সাক্ষী–প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে সাক্ষী–প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এ কারণে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আরও পড়ুন

লিমনের মায়ের দাবি, তাঁর ছেলে কোনো সন্ত্রাসী না। একটি ভালো ছেলে র‍্যাবের গুলিতে পা হারায়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার দাবি করেন।

র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক পা হারানো লিমন হোসেন ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর পাস করেন। ২০২০ সালে লিমন হোসেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

লিমন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘র‌্যাব অন্যায়ভাবে আমাকে গুলি করে পঙ্গু করেছে। আমি অনেক কষ্ট করে মানুষের ভালোবাসায় পড়ালেখা শেষ করেছি ঠিকই, কিন্তু আমার পা হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছি না। যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন যারা আমাকে পঙ্গু করেছে, তাদের বিচার দাবি করব।’

আরও পড়ুন

২০১১ সালে ঘটনার পর সন্ত্রাসী দাবি করে র‌্যাব লিমনসহ আটজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছিল। সেই দুটি মামলায় লিমনসহ সব আসামি আদালত থেকে ২০১৮ সালে নির্দোষ প্রমাণিত হন। ঘটনার শুরু থেকে লিমনকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।